মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বহু ভাষাবিদ আইনজ্ঞ ও অনুবাদক শ্রীশচন্দ্র বসু

নিউজজি ডেস্ক মার্চ ২১, ২০২৫, ১৪:৫১:০১

64
  • বহু ভাষাবিদ আইনজ্ঞ ও অনুবাদক শ্রীশচন্দ্র বসু

ঢাকা: শ্রীশচন্দ্র বসু এক বহু ভাষাবিদ আইনজ্ঞ ও অনুবাদক। শ্রীশচন্দ্র বসু পিতার কর্মক্ষেত্র পাঞ্জাবের লাহোরে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন । তবে পৈতৃক নিবাস ছিল বৃটিশ ভারতের বর্তমানে বাংলাদেশের খুলনা জেলার টেংরা-ভবানীপুরে। পিতা শ্যামাচরণ পাঞ্জাবের শিক্ষা-অধিকর্তার প্রধান কর্মচারীরূপে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে প্রভূত সাহায্য করেন।

কিন্তু বাল্য বয়সেই তার পিতৃবিয়োগ ঘটলে মাতা ভুবনেশ্বরী দেবীর যত্নে পড়াশোনা করেন। লাহোর পাঠরত অবস্থায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন । ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে লাহোরের সরকারি কলেজ থেকে বি.এ. পাশ করেন । ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকে শিক্ষক-শিক্ষন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতা বৃত্তি নেন।

কর্মজীবন শুরু করেন লাহোরে মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসাবে । এখানে কর্মরত অবস্থাতেই উর্দু ভাষায় প্রাকৃতিক ভূগোল বিষয়ে একখানি পাঠ্যপুস্তক লেখেন। সাথে সাথেই Student's Friend নামে ইংরাজী পত্রের পরিচালনা ও সম্পাদনা করেন। কলকাতার 'ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন' এর অনুকরণে ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবে 'ইণ্ডিয়ান ন্যাশনাল সোসাইটি' গঠনে উদ্যোগ নেন। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ হাইকোর্ট পরিচালিত আইন পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এলাহাবাদে আইন ব্যবসায় নিযুক্ত হন এবং দক্ষ আইনজীবী হিসাবে প্রতিষ্ঠালাভ করেন। নিজে ইতিমধ্যে পিটম্যান প্রবর্তিত আশুলিখন অর্থাৎ শর্টহ্যান্ড শিখে নিয়ে বিচারপতিদের রায় আশুলিখনের ভার গ্রহণ করেন । পরবর্তীতে তিনি সরকারি বিচার বিভাগে যোগ দেন । ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি এলাহাবাদে (বর্তমানে প্রয়াগরাজের) প্রথম দেশীয়দের দ্বারা পরিচালিত বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। শ্রীশচন্দ্র বহু ভাষাবিদ ছিলেন। হিন্দু আইন উত্তমরূপে আয়ত্ত করতে সংস্কৃত শেখেন। তেমনই বাইবেলের মর্মার্থ আয়ত্তের জন্য শেখেন হিব্রু ও গ্রীক ভাষা। ইসলাম ধর্মের জন্য শেখেন আরবি ও ফারসি। এছাড়াও ল্যাটিন ফরাসি ও জার্মান ভাষাতে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন । ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি 'পাণিনীয় অষ্টাধ্যায়ী' র ইংরাজীতে অনুবাদ করে সুপরিচিত হন।

এছাড়া যাবতীয় হিন্দুধর্মশাস্ত্রের সার সংকলন করে প্রশ্নোত্তরে ইংরাজীতে একটি গ্রন্থ, হিন্দি ভাষায় একটি বর্ণপরিচয় ও আশুলিখন প্রণালী বিষয়ে পুস্তক রচনা করেন । তিনি ' 'সেখ চিল্লী' ছদ্মনামে উত্তর ভারতে প্রচলিত কিছু উপকথা সংগ্রহ করে ইংরাজীতে 'Folk-tales ofHindusthan' লিপিবদ্ধ করেন। 'হিন্দুস্থানী উপকথা' নামে পরে সীতা দেবী ও শান্তা দেবী বাংলায় অনুবাদ করেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদের (বর্তমানে প্রয়াগরাজের) বাহাদুরগঞ্জে মাতার নামাঙ্কিত ভুবনেশ্বরী আশ্রমের নিজের বাড়িতে প্রাচীন হিন্দুশাস্ত্র প্রচারের উদ্দেশ্যে'পাণিনি কার্যালয়' স্থাপন করেন । এখান থেকেই দুর্লভ বা অপ্রকাশিত হিন্দুশাস্ত্রের গ্রন্থ সমূহ 'সেক্রেড বুকস্ অব দি হিন্ডুজ' নামক সিরিজের প্রকাশের ব্যবস্থা হয়। পরবর্তীতে শ্রীশচন্দ্রের অনুজ বামনদাস সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন ।

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বৃটিশ সরকার কর্তৃক 'রায়বাহাদুর' এবং বিদ্যাবত্তার জন্য কাশীর পণ্ডিতমণ্ডলী কর্তৃক 'বিদ্যার্ণব' উপাধি দ্বারা সম্মানিত হয়েছিলেন।

শ্রীশচন্দ্র বসু ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে জুন ৫৭ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন ।

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন