সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১ , ১৭ রমজান ১৪৪৬

ফিচার

সুভাষ দত্ত: পোস্টার বয় থেকে বিখ্যাত নির্মাতা

নিউজজি ডেস্ক ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২৫, ১৬:১৯:০৮

130
  • সংগৃহীত

ঢাকা: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে’কজন নির্মাতা হেঁটেছেন স্রোতের বিপরীতে, তৈরি করেছেন নিজস্ব পথ, তাদের মধ্যে অন্যতম সুভাষ দত্ত। তার নির্মিত একেকটি সিনেমা প্রজন্মের পর প্রজন্মে দিয়ে যাচ্ছে অনুপ্রেরণা। গল্পের ভাঁজে ভাঁজে তিনি ফুটিয়ে তুলতেন দেশ, সমাজ ও মানুষের সমস্যা, সংকট আর চেনা বাস্তবতার প্রেক্ষাপট।

সেই ষাটের দশক থেকে চার দশকের বেশি সময় ধরে সিনেমায় মিশে ছিলেন সুভাষ দত্ত। এরপর ২০১২ সালে চলে গেছেন পৃথিবী ছেড়ে। আজ ৯ ফেব্রুয়ারি সুভাষ দত্তের জন্মদিন।

সুভাষ দত্ত জন্মেছিলেন ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের মুনশিপাড়ায়। সেখানে তার মামার বাড়ি। আর তার পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলার চকরিতে। তবে সুভাষ বেড়ে উঠেছিলেন ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনের নিজ বাড়িতে।

অত্যন্ত স্বচ্ছল ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে সুভাষ দত্তের জন্ম। ছোটবেলাতেই তার মনের ভেতর জেঁকে বসে সিনেমার পোকা। তিনি চাইলেই পারতেন পরিবারের সহায়তা নিয়ে সিনেমা বানাতে, কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি চলে গেলেন ভারতের বোম্বেতে। সেখানে একটি সিনেমা পরিবেশনার স্টুডিওতে কাজ নেন তিনি। মাসিক বেতন মাত্র ৩০ টাকা!

আসলে বোম্বের সেই চাকরি টাকার জন্য করেননি সুভাষ দত্ত। তিনি সিনেমার ভেতর ঢুকতে চেয়েছিলেন। সিনেমার জগত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাই স্বচ্ছল জীবন ছেড়ে সামান্য বেতনের চাকরিতে যোগ দেন।

১৯৫৩ সালে ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন সুভাষ দত্ত। তখন তিনি এভারগ্রিন নামের একটি প্রচারণা সংস্থায় যোগ দেন। তখন তিনি সিনেমার পোস্টার আঁকার কাজ করতেন।

১৯৫৬ সালে মুক্তি পায় দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। এই সিনেমার পোস্টার তৈরি করেছিলেন সুভাষ দত্ত। এরপর আরও বেশ কিছু সিনেমার পোস্টার ডিজাইনের কাজ করেছিলেন তিনি।

নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আগেই সুভাষ দত্ত অভিনয়ে আসেন। ১৯৫৯ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ সিনেমায় প্রথমবারের মতো তিনি অভিনয় করেছিলেন। এরপর মুস্তাফিজের পরিচালনায় ‘হারানো দিন’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব।

সুভাষ দত্তের চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে অভিষেক হয় ১৯৬৪ সালে। সিনেমার নাম ‘সুতরাং’। এই সিনেমার মাধ্যমেই অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী। সিনেমাটি প্রশংসিত হয়েছিল সমালোচক মহলে।

সুভাষ দত্ত ছিলেন একজন চিন্তাশীল ও সৃষ্টিশীল নির্মাতা। তার কাছে বাণিজ্যের চেয়ে চলচ্চিত্র ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তার নির্মিত সিনেমাগুলোতে সেই ছাপ স্পষ্ট। সুভাষ দত্ত পরিচালিত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সুতরাং’, ‘কাগজের নৌকা’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আবির্ভাব’, ‘বলাকা মন’, ‘সবুজ সাথী’, ‘বসুন্ধরা’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘নাজমা’, ‘স্বামী-স্ত্রী’, ‘আবদার’, ‘আগমন’, ‘শর্ত’, ‘সহধর্মিণী’, ‘সোহাগ মিলন’, ‘পালাবদল’, ‘আলিঙ্গন, ‘বিনিময়’, ‘আকাঙক্ষা’, ‘আমার ছেলে’ ইত্যাদি।

নির্মাতা হিসেবে বিখ্যাত হলেও সুভাষ দত্তের অভিনয় জীবনটাও উল্লেখযোগ্য। মঞ্চ নাটকের নিবেদিত ব্যক্তি ছিলেন তিনি। অভিনয় করেছেন বহু সিনেমায়। সুভাষ অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রাজধানীর বুকে’, ‘সূর্যস্নান’, ‘চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘নতুন সুর’, ‘রূপবান’, ‘মিলন’, ‘নদী ও নারী’, ‘ভাইয়া’, ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’, ‘ক্যায়সে কাহু’, ‘আখেরি স্টেশন’, ‘সোনার কাজল’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘সমাধান’ প্রভৃতি।

সুভাষ দত্ত ১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ সিনেমার জন্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এই সিনেমাটি সে বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মোট পাঁচটি বিভাগে সেরা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে সুভাষ দত্তকে একুশে পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া সুভাষ দত্তের সিনেমা ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসব, মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব ও নামপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিল।

ব্যক্তিগত জীবনে সুভাষ দত্ত বিয়ে করেছিলেন সীমা দত্তকে। ১৯৫৪ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ২০০১ সালে সীমা দত্ত মারা যান। তিনি দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক।

ঢাকার ১২ রামকৃষ্ণ মিশন রোডে সুভাষ দত্তের বাসা ছিল। সেই বাসার নাম ছিল সত্যাশ্রয়। এই সত্যাশ্রয়েই ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন