সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ , ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

দৃষ্টিনন্দন ফুলটিয়া

নিউজজি ডেস্ক নভেম্বর ২৯, ২০২৩, ১২:৩৯:১০

206
  • দৃষ্টিনন্দন ফুলটিয়া

ঢাকা: আকার ও গড়ন-ধরনসহ চালচলনে অনেকটাই বিদেশি পোষা পাখি লাভবার্ডের মতো হলেও এটি আমাদের দুর্লভ আবাসিক পাখি ‘লটকন’ বা ‘ঝুলন টিয়া’। লেজকাটা টিয়া নামেও পরিচিত। পাতাটিয়া, ফুলটিয়া ও জোকার টিয়া নামেও স্থানীয়ভাবে স্বল্প পরিচিত।

বসবাস মূলত বৃহত্তর চট্টগ্রাম-সিলেটের পাহাড়-টিলাময় বন ও চা-বাগান এলাকা। আমাদের দেশের সবচেয়ে ছোট ও খাটো লেজের এই টিয়ারা সার্কাস বয় বা গার্লদের মতো গাছের সরু ডালপাতা বা লতায় উল্টো হয়ে ঝুলে-দুলে বা পাক খেয়ে নানা রকম মজাদার কসরত যেমন দেখাতে পারে, তেমনি পাতার সঙ্গে ক্যামোফ্লেজ হয়ে থাকতে পারে বিস্ময়করভাবে। এ ক্ষেত্রে ওদের শরীরের রংটাই সাহায্য করে।

ঝুলন টিয়ার সবচেয়ে মজাদার কাণ্ড হলো এদের ঘুমানোর কৌশল। গাছের ঝুলন্ত সরু ডালপাতায় চামচিকা বা বাদুড়ের মতো অবিকল উল্টো হয়ে ঝুলে ঘুমায়। বাংলাদেশের আর কোনো পাখি এভাবে ঘুমায় না বা জিরায় না। বেশ নাচ জানে এরা, পর্যায়ক্রমে দুই পা ওঠানামা করিয়ে পাখা ও লেজ একটু মেলে রেখে ঘাড়-মাথা দুলিয়ে ও শরীরের পালক ফুলিয়ে ধ্রুপদি নৃত্যের নানান রকম মুদ্রা বা কলা যেন ফুটিয়ে তোলে। এটা বেশি করে প্রজনন মৌসুমে।

এরা বাসা করে মাঘের মধ্যভাগ থেকে আষাঢ়ের প্রথম ভাগ পর্যন্ত। বাসা করে গাছের ছোট মুখওয়ালা খোঁড়লে। বাঁশের ফাঁপা খোলে যদি কাঠঠোকরার করা গর্তমুখ পায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা; হোক না গভীরতা এক-দেড় ফুট। কোনো সমস্যা নেই। প্রবেশমুখ দিয়ে ভেতরে ঢুকে নামবে বেয়ে বেয়ে, উঠবেও বেয়ে বেয়ে।

এরা ডিম পাড়ে ২-৪টি। রং চকচকে সাদা ও অনেকটা গোলগাল ধরনের। দুজনেই তা দেয় পালা করে। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৪-১৭ দিনে। ছানারা বেয়ে বেয়ে বাসার মুখে উঠে বসতে পারে ১৮-২২ দিনে। ডিম দেখতে খুব সুন্দর। তার চেয়েও সুন্দর সদ্য পালক গজানো ছানাদের দেখতে। মূল খাদ্য কচি পাতা, ফুলের কুঁড়িসহ নানা রকম ফল ও ফুলের মধুরেণু।

লটকনের ইংরেজি নাম Vernal Hanging Parrot. বৈজ্ঞানিক নাম Loriculus vernalis. দৈর্ঘ্য ১৪ সেমি। ওজন ২৮ গ্রাম। একনজরে হলুদাভ-পাতা সবুজ রঙের পাখি। পুরুষটির গলা-বুকের উপরিভাগটা নীল। খাটো-চৌকো ও ছোট লেজের পেছনের অংশ লাল। চোখের বৃত্ত হলুদ। ঠোঁট লালচে-কমলা অথবা কোরাল রঙা। ঠোঁটের আগা হলুদাভ। পা ও পাতা কমলা-হলুদ অথবা চকচকে হলুদ। চাপা মিষ্টি কণ্ঠে এরা অনেকটাই নেংটি ইঁদুরের মতো ডাকে। উড়তে পারে দ্রুতগতিতে। পরিবারের সদস্যরা মিলে বা ছোট-বড় দলে চলাচল করে।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন