শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ , ২৫ জিলকদ ১৪৪৬

বিনোদন

মিনা পাল থেকে মিষ্টি মেয়ে কবরী

নিউজজি ডেস্ক   এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ১৪:৪৯:৩৮

65
  • ছবি: সংগৃহীত

বাংলা সিনেমার সোনালি যুগের অন্যতম অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। তার মঞ্চে আবির্ভাব মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ সিনেমায় অভিনয়ের সুবাদে বড় পর্দায় যাত্রা শুরু। এ সিনেমার সাফল্যের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক সিনেমায় অসাধারণ অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন কবরী। দর্শকের ভালোবাসায় খেতাব পান ‘মিষ্টি মেয়ে’। সব ধরনের সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি।

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জন্মগ্রহণ করেন কবরী। তার আসল নাম ছিল মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল এবং মা লাবণ্য প্রভা পাল। নারী অধিকার কিংবা দেশপ্রেম! কোথায় নেই তিনি? যুক্ত ছিলেন রাজনীতিতেও! লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন কিংবা রাজনীতির মাঠ-ময়দানে দাপিয়ে বেড়ানো মানুষটির শেষ রক্ষা হলো না।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় ২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান অভিনেত্রী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। এক জীবনে পেয়েছেন তিনি অগণিত মানুষের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। এমন ভালোবাসাই হয়ত তাকে ফিরিয়ে আনবে এমনটা প্রত্যাশা করেছিল তার সহকর্মীরা। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে চলেই গেলেন গুণী এই অভিনেত্রী।

কবরী রুপালি পর্দায় দর্শকদের নয়নমণি। জীবনের ৫০টি বছর চলচ্চিত্রের সঙ্গে কাটিয়েছেন তিনি। অভিনয় জীবন পেরিয়ে বাস্তব জীবনেও মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছেন সংসদ সদস্য হিসেবে। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে যশ-খ্যাতি, স্বীকৃতি-পুরস্কার থেকে শুরু করে এক জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছেন তিনি। নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন।

চলচ্চিত্রে সপ্রতিভ হলেও ব্যক্তিজীবনে কিছুটা নিষ্প্রভ ছিলেন কবরী। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় বিয়ে করেন চিত্ত চৌধুরীকে। পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন গোলাম সারোয়ারকে। তখন থেকেই তিনি কবরী সারোয়ার নামে পরিচিত। প্রায় তিন দশক সংসার করার পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৮ সালে। মৃত্যুর সময় তিনি পাঁচ সন্তান রেখে গেছেন।

১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে উঠেছিলেন। তারপর টেলিভিশন এবং সিনেমায় পদার্পণ। কবরী চলচ্চিত্রে পা রাখেন মাত্র ১৪ বছর বয়সে। ১৯৬৪ সাল প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘সুতরাং’-এ ‘পরানে দোলা দিলো এই কোন ভোমরা’ গানের মাধ্যমে মাত্র কিশোরী কবরীকে দর্শকদের কাছে পরিচিতি করান। প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত। মিষ্টি মেয়ের খেতাব পেয়ে যান কবরী।

পরের বছর অর্থাৎ ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়। এরপর ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ সিনেমাগুলোতে অভিনয় করেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। এরপর পরিবার ছেড়ে এক কাপড়ে পাড়ি জমান ভারতে। কলকাতায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন কবরী।

স্বাধীনতার পর আবারও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন কবরী। তার শতাধিক সিনেমার মধ্যে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩) অন্যতম। নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্রটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তবে ১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে করা ‘সুজন সখী’ সিনেমাটি জনপ্রিয়তার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।

বাংলা চলচ্চিত্রের নায়িকাদের মধ্যে যাদের সবচেয়ে বেশি গান জনপ্রিয় তাদের মধ্যে কবরী নিঃসন্দেহে উপরের সারিতেই আছেন। ‘সুজন সখি’ সিনেমার বিখ্যাত গান ‘সব সখিরে পার করিতে’ কে বলা হয় প্রেম নিবেদনের সবচেয়ে জনপ্রিয় গান।

কবরীর জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে—‘আগন্তুক’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সারেং বৌ’, ‘দেবদাস’, ‘হীরামন’, ‘চোরাবালি’, ‘পারুলের সংসার’।

৫০ বছরের অধিক দীর্ঘ সময়ে রাজ্জাক, ফারুক, সোহেল রানা, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল ও বুলবুল আহমেদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন কবরী। তবে রাজ্জাক-কবরীর মতো জনপ্রিয় জুটি ঢাকাই সিনেমায় বিরল।

২০০৫ সালে ‘আয়না’ সিনেমা নির্মাণের মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন কবরী। ওই সিনেমার একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে তিনি অভিনয়ও করেন। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বর্ণিল ক্যারিয়ারে অভিনেত্রী হিসেবে মাত্র একবার পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। কারণ, তিনি যখন ক্যারিয়ারের স্বর্ণালি সময় কাটিয়েছেন তখনো এই পুরস্কার চালুই হয়নি। ২০১৩ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন জাতীয় পুরস্কারের আসরে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’।

নিউজজি/পিএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন