শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১ , ৯ শাবান ১৪৪৬

বিনোদন

গানের বুলবুল, প্রাণের বুলবুল

নিউজজি ডেস্ক  জানুয়ারী ২২, ২০২৫, ১৪:৩৪:০৪

56
  • সংগৃহীত

ঢাকা: যার কথা, সুর বাঙালির প্রাণে বাজে; অবসর কিংবা প্রিয় মুহূর্তের সেরা সঙ্গী হয়, তিনি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অতুলনীয় এই সঙ্গীতজ্ঞ। তার সৃষ্ট এত বেশি গান জনপ্রিয়তার মাধ্যমে কালের সীমানা পার করেছে যে, অন্য সঙ্গীত ব্যক্তিত্বরা সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেন না! বলাই বাহুল্য, বাংলা সিনেমার গানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের স্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

গানের এই বুলবুলের চলে যাওয়ার দিন আজ। ২০১৯ সালের ২২ জানুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন নন্দিত এই সঙ্গীতজ্ঞ। কিন্তু চলে গিয়েও যারা রয়ে যান আরও বেশি গভীরভাবে, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তাদেরই একজন।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ছিলেন একজন পুরোদস্তুর সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। তিনি লিখতেন, সুর করতেন, আবার সঙ্গীত পরিচালনা করতেন। এর বাইরে রয়েছে তার একটি মহান পরিচয়। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।

১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। কৈশোর কেটেছে যুদ্ধের পরিবেশে। তবু তার ভেতরে সৃষ্টি হয়েছিল এক সঙ্গীত ঘেরা এক নরম মন। যার সুবাদে ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি নিয়মিত গান করতে শুরু করেন।

সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। ‘মেঘ বিজলি বাদল’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করে তিনি নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেন। তবে জনপ্রিয়তার কাতারে আসতে তার সময় লেগেছে বেশ কয়েক বছর। আশির দশকে তার সৃষ্ট গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে।

যার শুরুটা ১৯৮৪ সালের ‘নয়নের আলো’ সিনেমার মাধ্যমে। এই একটি সিনেমায় বুলবুলের সৃষ্ট ‘আমার সারাদেহ খেয়োগো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’ গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। যেগুলো আজও শ্রোতাদের মনে জায়গা করে আছে।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল শতাধিক সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। আর সেগুলো থেকে বাংলা সঙ্গীত পেয়েছে অসংখ্য মানসম্মত কালজয়ী গান। যেগুলো কালের খেয়া পার করে জনপ্রিয় হয়ে আছে এখনও। তার সুরে গান গেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন বহু শিল্পী। একাধিক প্রজন্মের অনেক শিল্পীর ক্যারিয়ারের শ্রেষ্ঠ গানগুলো বুলবুলেরই সৃষ্ট। যেমন- এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সৈয়দ আবদুল হাদি, সামিনা চৌধুরী, খালিদ হাসান মিলু, আগুন, কনকচাঁপা, মনির খান প্রমুখ।

শুধু প্রেম-ভালোবাসা নয়, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের দখল ছিল দেশাত্মবোধক গানেও। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অনেকগুলো কালজয়ী দেশাত্মবোধক গান সৃষ্টি করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল দেখ গো মালি’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেবো না’ ইত্যাদি।

এছাড়া বুলবুলের সৃষ্ট কালজয়ী গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন, আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি, ও আমার মন কান্দে- ও আমার প্রাণ কান্দে, আইলো দারুণ ফাগুনরে, আমি তোমার দুটি চোখে দুটি তারা হয়ে থাকবো, আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারই ছোঁয়াতে যেন পেয়েছি, তোমায় দেখলে মনে হয়, হাজার বছর আগেও বুঝি ছিল পরিচয়, ঐ চাঁদ মুখে যেন লাগে না গ্রহণ, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, আম্মাজান আম্মাজান, এই বুকে বইছে যমুনা, সাগরের মতই গভীর, আকাশের মতই অসীম, আমি জীবন্ত একটা লাশ, প্রেম কখনো মধুর, কখনো সে বেদনা বিধুর, পড়ে না চোখের পলক, যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে, কী আমার পরিচয়- ঠিকানা কী জানি না, অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে, তুমি আমার জীবন- আমি তোমার জীবন, তোমার আমার প্রেম এক জনমের নয়, তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ, জীবনে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন, ঘুমিয়ে থাকো গো স্বজনী, আমার হৃদয় একটা আয়না, বিধি তুমি বলে দাও আমি কার, এই তুমি সেই তুমি যাকে আমি চাই, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ে সুখের দোলা, তুমি আমার এমনই একজন, একাত্তরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল, বিদ্যালয় মোদের বিদ্যালয় এখানে সভ্যতারই ফুল ফোটানো হয়, জীবন ফুরিয়ে যাবে ভালবাসা ফুরাবে না জীবনে, অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন, ওগো সাথী আমার তুমি কেন চলে যাও, একদিন দুইদিন তিনদিন পর- তোমারি ঘর হবে আমারি ঘর, নদী চায় চলতে, তারা যায় জ্বলতে, ও ডাক্তার, ও ডাক্তার, শেষ ঠিকানায় পৌঁছে দিয়ে আবার কেন পিছু ডাকো, চিঠি লিখেছে বউ আমার, আট আনার জীবন এবং আমার দুই চোখে দুই নদী।

সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল রাষ্ট্রীয় অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মাননা একুশে পদক-এ ভূষিত হন। চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করে পেয়েছেন দুই বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এর মধ্যে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে ‘হাজার বছর ধরে’ চলচ্চিত্রের জন্য ২০০৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।

একইভাবে ২০০১ সালে ‘প্রেমের তাজমহল’ চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি রেকর্ড সংখ্যক এগারোবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেছেন। এছাড়াও শিখা অনির্বাণ পদক, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস এবং শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকসহ বহু পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হন।

নিউজজি/পি.এম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন