শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১ , ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

মাতৃত্ব বাঁধা হতে পারেনি প্রমিতার পথে

কুবি প্রতিনিধি ৭ অক্টোবর , ২০২৪, ১৮:৩৪:৫৩

959
  • মাতৃত্ব বাঁধা হতে পারেনি প্রমিতার পথে

কুবি: বিকাল ৪টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মেডিক্যাল সেন্টারে গিয়ে দেখা গেলো ডা. মাহমুদুল হাসান খানের চেম্বারে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের এক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীর সামনে বসে আছেন একই বিভাগের শিক্ষক ড. হুসনে জাহান চৌধুরী।

পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর জানা গেলো মূল ঘটনা। মেডিক্যাল সেন্টারে পরীক্ষা দেয়া শিক্ষার্থীর নাম প্রমিতা চৌধুরী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী। গত ২২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান। নাম রেখেছেন প্রজ্ঞা।

প্রজ্ঞার মা প্রমিতা চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে। তার বাবা জুয়েল দেবের বাড়িও একই এলাকায়। তবে ভিন্ন গ্রাম। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে প্রমিতা চৌধুরী ও জুয়েল দেবের বিয়ে হয়।

খুব অল্প সময়েই প্রমিতা চৌধুরী প্রবেশ করেছেন জীবনের নতুন নতুন স্তরে। প্রথমে বিয়ে তারপর মাতৃত্ব তাকে পৃথিবী দেখা শিখিয়েছে নতুনভাবে। একদিকে প্রমিতা সামলাচ্ছেন তার নিজের পড়ালেখা আরেকদিকে সামলাচ্ছেন মেয়ের ভবিষ্যত। তবে তিনি একা নন। তার স্বামী জুয়েল দেব বাবার দায়িত্বও পালন করে যাচ্ছেন বাবার মতোই। তাই খুব বেগ পোহাতে হচ্ছে না তাকে।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে পড়ালেখা, স্বপ্ন, নিজেকে নিয়ে চিন্তা সবকিছুই মুছে ফেলতে হয় স্মৃতি থেকে। কিন্তু প্রমিতার তা করতে হয়নি। তিনি পেয়েছেন তার স্বামী, শ্বশুরবাড়ির পূর্ণ সমর্থন। এমনটাই জানিয়েছেন প্রমিতা। তিনি যখন পড়েন তখন শ্বশুর-শাশুড়িরাই ছোট্ট প্রজ্ঞা দেবকে দেখে রাখেন পরম মমতায়। আবার পড়া শেষে তার মাতৃত্বের দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন কোনও ক্লান্তি ছাড়াই। আলাপচারিতায় উঠে আসে তার বাইরে পড়তে যাবার স্বপ্নের কথা।

প্রমিতাকে জিগ্যেস করি, বড় হয়ে প্রজ্ঞাকে কি হিসেবে দেখতে চান? প্রতিউত্তরে প্রমিতা বলেন, ‘বড় হয়ে মেয়ে যা হতে চায় হবে। তবে আমি চাইব সবার আগে ভালো মানুষ যেন হয়ে উঠে।’

প্রমিতার আজ শেষ পরীক্ষা। ৮ অক্টোবর স্বামীর সাথে সকাল সকাল ছুটবেন বাঁশখালীর উদ্দেশ্যে। পূজা উপভোগ করবেন স্বামী-সন্তান, পরিবারসহ। তার কপালে ভাগ্যদেবতা যেন আরও এমন সুখের সময় আনে সেই প্রার্থনা করবেন আসন্ন লক্ষ্মী পূজায়।

তবে তার এই আনন্দের দিনে তিনি তার দুঃসময়ের মানুষদের কথা ভুলে জাননি। তার দুঃসময়ে পাশে থাকা মানুষদের মঙ্গলের জন্যও তিনি প্রার্থনা করবেন ভাগ্য দেবতার কাছে। তার দুঃসময়ের মানুষেরা হলো তারই সহপাঠীরা। প্রচণ্ড প্রসব বেদনা নিয়ে যখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন তখন তার সহপাঠীরা পরীক্ষার আগের রাতেও তার পাশে বসে ছিল হাসপাতালে। তাদের সাহায্যে প্রমিতার মাতৃত্বের পথে হেঁটে চলাটা বন্ধুর হয়নি। সহপাঠীদের পাশাপাশি তার নতুন যাত্রায় নানাভাবে সাহায্য করেছে বিভাগের শিক্ষকরাও। আলাপচারিতায় শিক্ষকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন প্রমিতা।

ইতোমধ্যে প্রমিতার শিক্ষক ড. হুসনে জাহান চৌধুরী পরীক্ষার খাতা গুছিয়ে চলে যাবার জন্য চেয়ার ছেড়ে উঠেছেন । যাবার আগে আশীর্বাদ করে বলে গেলেন, 'জীবনে ভালো কিছু করতে হবে। অনেক ঝড় ঝাপটা শেষে যখন এটুকু পর্যন্ত আসতে পেরেছো তাহলে আরো বড় জায়গায় যেতে হবে।’

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন