বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ৩ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সংস্কৃতি

একটি অনুষ্ঠান ভাবনা

কাওনাইন সৌরভ ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১৪:৪২:২৪

482
  • একটি অনুষ্ঠান ভাবনা

ভাবতে পারার ক্ষমতা দিয়ে পৃথিবী আজ মানুষের হাতের মুঠোয়। রিক্সা যে চালায় সেও ভাবে আবার যে রিক্সায় চড়ে সেও ভাবে। তেমনি রাষ্ট্রের উপর তলার  ব্যক্তিবর্গ ভাবে আবার নিম্ন থেকে নিম্নতর ব্যক্তিরাও ভাবে। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা ভাবনা আর এই আলাদা আলাদা ভাবনাই মানুষকে আলাদা করে দেয়। ভাবতে পারে সবাই কিন্তু ভাবনার প্রয়োগ করতে পারে না অনেকেই। ভাবনা প্রয়োগ করার জন্য দরকার গঠনমূলক ভাবনা। মস্তিষ্ক থেকে বের করে সেই গঠনমূলক ভাবনার গায়ে রূপ-রেখার সাহায্যে একটা বস্তুগত আকার-প্রকার-ধরন-প্রকরণ দেয়ার ফলে সেটার গায়ে সৃজনশীলতার ছাপ বিদ্যমান থাকে।

সৃজনশীল ভাবনা যতক্ষণ মস্তিষ্কে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত মূল্যহীন- প্রকাশ বা উপস্থাপনেই এর মূল্যায়ন নির্ধারণ হয়ে থাকে। ভাবনা প্রকাশের জন্য আবার অসংখ্য স্তর অতিক্রম করতে হয়- জানতে হয় নানান সৃষ্টি কৌশল। কেননা সৃষ্টি কৌশলের রহস্য ভোক্তা তৈরিতে সাহায্য করে। নাটক, সিনেমা, চিত্রকলা, সংগীত- সব শিল্পেরই মূল সুর সুন্দরের প্রতিনিধিত্ব করা। 

যে কোন অনুষ্ঠানের দর্শক জনপ্রিয়তার মূল কারণ মূলত অনেক। তার মধ্যে অন্যতম হল- অনুষ্ঠানের ভিন্নতা। প্রথমত ফরমেট প্রোগ্রামের বাইরে চিন্তা করা। অনুষ্ঠানের নতুন কাঠামো, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নান্দনিক এবং বিষয়বস্তুর প্রতি সচেতনভাবে নজর রাখা । বিনোদনের পাশাপাশি নিজস্ব দায়বদ্ধতার পরিচয়, স্বাভাবিক জীবনের নানা দিকের অবলোকন- সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে সচেতন তৎপরতা-এসব গুণাবলীর কারণে একটি ভালো মানের অনুষ্ঠান  আকাশ সংস্কৃতিতে মাথা উচুঁ করে দাঁড়ায় সাহায্য । এ সত্য আমার আলোচ্য বিষয় নয়- আমার বিষয় একটি অনুষ্ঠান ভাবনা।

এখন প্রশ্ন  অনুষ্ঠান তাহলে কিভাবে তৈরি হয় ? কী  উপায়ে অন্য ৮/১০টা অনুষ্ঠান থেকে আলাদা করা সম্ভব? একটা অনুষ্ঠানে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকবে? কেন অনুষ্ঠানটি দর্শক উপভোগ করবে? সমাজের জন্য কি ম্যাসেজ বহন করবে? সময় স্বল্পতার কারণে এতো ভাবনা প্রায়ই ভাবা যায় না। আবার স্বল্প সময়েই অনেক বড় ভাবনা ভাবা সম্ভব। নির্ভর করে ব্যক্তির সাথে তার ভাবনার সম্পর্ক কেমন, তার উপর। সুনির্দিষ্ট ভাবনা একটা অনুষ্ঠান নির্মাণের মূলমন্ত্র।

সহজ কথায়- প্রথমে দরকার কনসেপ্ট বা আইডিয়া। তারপর আইডিয়া ডেভেলপ। উপস্থাপনের কৌশল বা টেকনিক্যাল দিক সর্ম্পকে সুস্পষ্ট ধারণা। এসবের কারণে একটা সাধারণ আইডিয়ার অনুষ্ঠান অসাধারণ হতে পারে- তার উপস্থাপন কৌশলের জন্য। ব্যাকরণিক দিক থেকে হিসেব করলে উপস্থাপনের জন্য ৩টি ধাপ  অতিক্রম করতে হয়। 

এক- প্রি-প্রোডাকশন, দুই- প্রোডাকশন, তিন- পোস্ট প্রোডাকশন। 

প্রি-প্রোডাকশন মূলত: আইডিয়া ডেভেলপ, বাজেট, আউটডোর হলে লোকেশন ভিজিট, আর্টিস্ট নিবার্চন, এবং টেকনিক্যাল ক্রুদের সাথে প্রয়োজনীয় মিটিং করে শুটিং এর দিনক্ষণ নির্ধারণ করা। সেই সাথে প্রয়োজন বুঝে প্রপস (সেট ও হ্যান্ডস) সংগ্রহ করা। 

প্রোডাকশন- মূলত: শুটিং অর্থাৎ প্রি-প্রোডাকশনের নানা দিকের সুসমন্বয় ঘটিয়ে একটি সফল শুটিং করা।

পোস্ট-প্রোডাকশন- শুটিং পরবর্তী কার্যক্রম, এডিটিং/সম্পাদনা, মিউজিক, কম্পিউটার গ্রাফিক্স। এসব কিছু- পরিমিতবোধ দিয়ে দৈর্ঘ্যরে সীমাবদ্ধতা বুঝে পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন করা।

শুটিং, এডিটিং জাতীয় টেকনিক্যাল দিক জানতে একজন শিক্ষানবীশ নির্মাতার খুব বেশী সময় ব্যয় করতে হয় না। কিন্তু ভাবনা বা কনসেপ্ট এর জায়গা তৈরি করতে অনেক দীর্ঘ সময় পার করতে হয় নানান অনুশীলনের মধ্য দিয়ে। একজন নির্মাতাকে শিল্পের সব বিষয়েই সর্বনিম্ন ধারণা পোষণ করতে হয়- যা কোন শর্টকোর্সে সম্ভব নয়। এ বিষয়টা সহজ করে ভাবলে সহজ আর জটিল করে ভাবলে জটিল। যাইহোক- একজন অনুষ্ঠান নির্মাতা হিসেবে আমার লেখার বিষয়- ‘একটি অনুষ্ঠান ভাবনা’।

পূর্বেই আলোচনা করেছি আমার সীমাবদ্ধ ধারণা দিয়ে। যদিও আমি এখনো খুঁজে পাইনি সীমানার কোন জায়গায় পৌঁছালে সীমালঙ্ঘন অথবা সীমাবর্ধণ হবে। যাইহোক একটি উদাহরণ হিসেবে আমার একটি অনুষ্ঠান উপস্থানের আদ্যপান্ত তুলে ধরছি।  ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। এ দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাভিশনের জন্য একটি বিশেষ  অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে চাই। বেশ কয়েকদিন নানান বিষয় এবং নানান বই পত্র ঘেটে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম-  নিলীমা ইব্রাহীমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ অবলম্বনে ‘বীরাঙ্গনার কথা’ নামক একটি অনুষ্ঠান করবো। 

প্রথমতঃ আমার নিজের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে- আমি কি করতে চাই? কেন করতে চাই? কিভাবে করতে চাই? কোথায় করতে চাই? কাদের জন্য করতে চাই? 

উত্তর যদি হয়- আমি একটা অনুষ্ঠান করতে চাই। 

কেন করতে চাই- ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে। 

কিভাবে করতে চাই- ক্যামেরার মাধ্যমে। 

কোথায় করতে চাই- স্টুডিওতে। 

কাদের জন্য করতে চাই- দর্শকদের জন্য। 

এ জাতীয় সোজাসাপ্টা উত্তর কোন জোকস্ এর অনুষ্ঠান বা মীরাক্কেলে সম্ভব। কিন্তু সৃজনশীল চিন্তার সাথে নান্দনিকতার সমন্বয় ঘটিয়ে খুব সহজে উত্তর দেয়া- আসলে খুব সহজ নয়। এখানে ভাবনার প্রয়োজন। তারপর প্রয়োজন টেকনিক্যাল দিকের অ ই ঈ উ ।  আর সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। 

এবার আসল কথা বলি-‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ বইটি আগে পড়েছি- পড়ার জন্য, তবে অনুষ্ঠান নির্মাণের লক্ষ্যে বইটি পুণরায় পড়তে হয়েছে। বইটিতে একাধিক বীরাঙ্গনার কাহিনী বর্ণিত। এক একটা কাহিনী দেড় থেকে দুই ঘন্টার অথচ আমার অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি হবে ২৩/২৪ মিনিট। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই আমি একটা কাহিনী করব-আর সেটা নির্বাচন করি শেফালির কাহিনী। এ কাহিনীর জন্য আমার একজন আর্টিস্ট দরকার- যিনি শেফালীর চরিত্র ধারণ করবেন। সময়ের স্বল্পতার জন্য চিত্রনাট্য করে নাটক আকারে করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে একমাত্র উপায় পাঠঅভিনয়। একজন আর্টিস্ট শেফালী হয়ে তার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্ণনা করবেন ২৩/২৪মিনিটে। তাতে দর্শক ধরে রাখা কতটা সম্ভব? ভিন্নতা দরকার। কিন্তু কিভাবে ? না-কি ৩জন আর্টিস্ট নিয়ে বীরাঙ্গনার ৩টি চরিত্র উপস্থাপন হবে? এক একটা চরিত্র ৭/৮মিনিট সময় পাবে- তাতে ভিন্নতা আসবে তবে চরিত্রের গভীরতা হারিয়ে যাবে। তাহলে উপায়? 

ভাবতে ভাবতে উপায় মিলে যায়। 

বাংলা বর্ণনাত্নক নাট্যাভিনয় রীতিতে এক চরিত্র একাধিক অভিনেতা/অভিনেত্রী দ্বারা উপস্থাপিত হয়- সেক্ষেত্রে ‘শেফালী’র চরিত্র ৩/৪ জন অভিনেত্রী নিয়ে করা সম্ভব। যুক্তিটা এ রকম- একজন আর্টিস্ট বীরাঙ্গনা হবার আগের শেফালীর চরিত্রে রূপদান করবে। একজন আর্টিস্ট বীরাঙ্গনা শেফালীর চরিত্র রূপদান করবে এবং শেফালীর হয়ে সূত্রধর হিসেবে কথা-বলবে একজন। মোট ৩জন আর্টিস্ট এক চরিত্র রূপদান করবে- কিন্তু কোথায় করবে? কিভাবে করবে ? 

যেহেতু স্টুডিওতে শুটিং করতে  হবে- তাহলে সেট কি হবে? যদিও সেট ডিজাইনার আছে- তবে নির্মাতা হিসেবে আমি কি চাচ্ছি? আমার ভাবনা কি? কি ধরনের সেট দরকার- এ-নিয়ে আবার চিন্তা-ভাবনা চলছে। সেট ডিজাইনারের সাথে শেয়ার করার আগে আমার নিজস্ব সেট ভাবনা পরিস্কার হওয়া জরুরী। 

মানুষ যত ভাববে তার মস্তিষ্কে ভাবনার দরজা তত খুলে যাবে। নতুন অনেক পথ বের হবে। আমিও নতুন পথের সন্ধানে মস্তিকে পদচারণা করছি। হঠাৎ বিদ্যুৎ খেলে যায় মাথায়। একটা সাদা সেট-তার মাঝখানে লাল আলো এবং তার চারপাশে সবুজ আলো। মনেহবে একটা জ্বলজ্বলে পতাকা। তবে তার গঠন কাঠামো প্রোপোশন ঠিক নেই। সেখানে অসংখ্য বীরাঙ্গনা। কেউ বসে, কেউবা দাঁড়িয়ে। তাদের প্রত্যেকের গায়ে সাদা শুভ্র কাপড়। কিন্তু লাল ও সবুজ আলোতে কারো কারো মুখ লাল, কারো সবুজ। আবার লাল সবুজের সংযোগস্থলেও কেউ কেউ। এরকম একটি সেটের সামনে ১ফিট উঁচু একটা প্লাটফর্মে বসা মূল চরিত্র ‘শেফালী। মুহূর্তের মধ্যে এই ভাবনাটা আমি আঁকড়ে ধরে অনুষ্ঠানের সেট পরিকল্পনা করে ফেলি। মনে হল এটাই বেটার সেট প্লান হতে পারে। যদি সঠিকভাবে আয়োজন করা যায়।  

যে কোন অনুষ্ঠান করতে গেলে টাকার দরকার। ব্যয়ের খাতগুলো খুঁজে বের করা হয়- যাকে বলে বাজেট। শুটিং ডেট অনুযায়ী আর্টিস্টদের (ঈশিতা, রোকেয়া প্রাচী এবং শম্পা রেজা) সাথে ভাবনা শেয়ার করি এবং তাদের ডেট নিয়ে নেই। শুটিংয়ে যাবার আগেই প্রয়োজনীয় প্রপস (সেট+হ্যান্ডস) সংগ্রহ, টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে মিটিং এবং স্ক্রিপ্ট সম্পাদনার কাজ করি। শেষ হলেই আর্টিস্টকে পৌঁছে দেব। স্ক্রিপ্ট পড়ার জন্য আর্টিস্টকে কম হলেও কিছু সময় দিতে হবে মানসিক প্রস্তুতির জন্য। কেননা আর্টিস্ট এর মানসিক প্রস্তুতিই একজন নির্মাতার মূল পুঁজি। বয়সে, অভিজ্ঞতায়, জ্ঞানে আর্টিস্ট ও নির্মাতার মধ্যে ব্যবধান থাকলেও নির্দিষ্ট একটা কাজে উভয়েই যদি ভাবনার মূল জায়গায় পৌঁছাতে পারে- তবে উভয়েরই মূল লক্ষ্য হয়- সৃজনশীলতার সীমানাবর্ধণ করা। শুধু নির্মাতা ও আটিস্ট নয়-ক্যামেরাম্যান, লাইটম্যান, মেকআপম্যান সহ প্রডাকশনের প্রত্যেকের পারস্পরিক সহযোগীতা- আন্তরিকতা ও শ্রদ্ধাবোধ- এ তিনের সমন্বয় থাকলে ভালো কিছু উপহার দেয়া অবশ্যই সম্ভব। 

প্রি-প্রোডাকশন ভালো হলে প্রোডাকশন ভালো হতে বাধ্য। আর প্রোডাকশন ভালো হলে একটি সফল পোস্ট প্রোডাকশন নিশ্চিত। সে জন্যেই প্রি-প্রোডাকশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জমিন যদি ভালো হয়-প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ফলন ভালো হবে- এটা প্রকৃতির হিসেব। 

শুটিংয়ের দিনে নির্ধারিত সময়ের আগে থেকে আর্টিস্ট আসা শুরু হয়। আগে থেকেই বলা ছিল প্রত্যেকে সাদা শাড়ি নিয়ে আসবে। তেমনি মেকআপম্যানকেও বলা ছিল আর্টিস্টের কি রকম মেকআপ-গেটআপ হবে- সে অনুযায়ী প্রত্যেককে প্রস্তুত করে দিবে। অন্যদিকে স্টুডিওতে চলছে সেট নির্মাণ। সেট ডিজাইনার মনিটরের সামনে বসে ফ্রেম টু ফ্রেম ধরে গঠন বিন্যাস, পরিপ্রেক্ষিত, আলোছায়ার (কম্পোজিশন, পারর্সপেকটিভ, লাইট এন্ড শ্যাডো) মাধ্যমে একটা সেট তৈরী করেন। টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সেটের উপাদান বা এলিমেনস হিসেবে জীবন্ত মানুষ ব্যবহার করছি এই অনুষ্ঠানে। 

প্রোডাকশন সহকারী হিসেবে যারা কর্মরত তারা আর্টিস্টের খাবার, চা-পানি সরবরাহ, শুটিং টেপ, স্ক্রিপ্ট সরবরাহ সহ আনুসঙ্গিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। সেট নির্মাণ শেষ হলেই শুটিং শুরু হবে। স্টুডিওতে শুটিং করার বড় সুবিধা হল-৩ টা ক্যামেরা থাকে। অনলাইন অডিও, ভিডিওর সহযোগীতায় শুটিং শেষ হয় অর্থাৎ প্রোডাকশন শেষ হয়। এখন পোস্ট প্রোডাকশনে কি ধরণের মিউজিক ব্যবহার করা হবে, এডিটিংয়ে বিশেষ ইফেক্ট ব্যবহার করা হবে কি-না? কম্পিউটার গ্রাফিক্স (সিজি) কেমন হবে? কালার, শর্টকাটিংসহ নানা ভাবনা। ভাবতে কোন দোষ নেই এজন্যে কাউকে কোন জবাবদিহিতা বা জরিমানা দিতে হবে না। তবে রাতের ঘুম যেন নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখা জরুরী- কেননা এডিটিংয়ে বসলেই প্রমাণিত হবে- নান্দনিক সম্পাদনার জন্য সংযোজন ও বিয়োজনের জয় পরাজয়। নির্মাতার মুখ কখন হাস্যোজ্জ্বল আর কখন নির্মম হবে তা সময়ই নির্ধারণ করে দিবে। নির্মম শব্দটা আমি পজিটিভ অর্থে ব্যবহার করেছি। কেননা একটু সুন্দরের জন্যে কিংবা গঠনমূলক কাজের জন্যে যদি মনে হয় ফুটেজের কোন অংশ অপ্রয়োজনীয় বা বাহুল্য- সেক্ষেত্রে অনেকখানি ফুটেজ ফেলে দেবার অর্থে নির্মম হওয়া জরুরী। 

পোস্ট প্রোডাকশন হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এজন্য যে, নিজস্ব কোন ভাবনা তুলে আনার জন্য যে স্তর গুলো (প্রি-প্রোডাকশন + প্রোডাকশন) অতিক্রম করা হয়েছে সেগুলোর নান্দনিক ব্যবহার নির্ভর করে নির্মাতার নিজস্ব পরিমিতিবোধের উপর। একদিকে নান্দনিক অন্যদিকে পরিমিতিবোধ এ-দুয়ের সফল প্রয়োগে ফুটেজের মান, রূপ ও রসের উত্তরোত্তর পরিবর্তন সম্ভব।

এনিমেটর এর কাছ থেকে গ্রাফিক্স সংগ্রহ, এডিটিংয়ে বসে শুটিংকৃত ফুটেজ কাটছাট করে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যরে টাইমলাইন তৈরী, প্রয়োজনীয় মিউজিক ব্যবহার এবং শিল্পী/কলাকুশলীসহ অনুষ্ঠানের নেপথ্যে যাদের শ্রম ও মেধা জড়িত, তাদের প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করে ইন্ডটাইটেল বসিয়ে মাস্টার টেপে ডাউনলোড / কনভার্ট করে মেমোরিতে রাখাই পোস্ট-প্রোডাকশন।

অত:পর সম্প্রচার হবার অপেক্ষায়... 

দর্শক যে কোন অনুষ্ঠানের প্রাণ। সম্প্রচার হলেই দর্শকের প্রতিক্রিয়া পরিমাপ করা সম্ভব। যে ভাবনা থেকে অনুষ্ঠান করা সে ভাবনা কতটা দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করতে পেরেছে তার উপরই নির্ভর করে অনুষ্ঠানের সফলতা। এ সফলতার অংশীদার নেপথ্যের প্রত্যেকটা মানুষ। অনুষ্ঠান নির্মাতা এ সফলতার সেতুবন্ধনকারী। যা তার নিত্য নতুন কাজের উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু অনুষ্ঠান ব্যর্থ হলে তার পুরো দায়ভার নির্মাতাকেই মাথা পেতে নিতে হয়- এটা নির্মম হলেও কঠিন সত্য। অনুষ্ঠানের গ্লামার, বিনোদন, নান্দনিকতা, উৎকণ্ঠা সব কিছুরই পরিমাপক দর্শকদের ইন্দ্রিয়। তাই দর্শকদের স্যালুট দিয়ে একটি অনুষ্ঠান ভাবনার এখানেই ইতি টানছি।  

লেখক

সিনিয়র নির্বাহী প্রযোজক

বাংলাভিশন

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন