বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ , ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সংস্কৃতি

আজ সুরের জাদুকর আর ডি বর্মণের জন্মদিন

নিউজজি প্রতিবেদক ২৭ জুন, ২০২২, ১৭:১৬:০৮

241
  • আজ সুরের জাদুকর আর ডি বর্মণের জন্মদিন

‘মনে পড়ে রুবি রায় কবিতায় তোমাকে, একদিন কত করে ডেকেছি’ বা ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে যো দিলকো’-এর মতো জনপ্রিয় গানটি মনে আছে কি? শ্রোতাদের মনে আবেগের ঢেউ তোলা গানটির রূপকার রাহুল দেব বর্মণ-এর আজ জন্মদিন। কাছের মানুষদের কাছে ‘পঞ্চম’ নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি।

ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত হিন্দি এবং বাংলার সঙ্গীতাঙ্গন কাঁপানো আর ডি বর্মণ ১৯৩৯ সালের ২৭ জুন জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতায়, ত্রিপুরার এক সঙ্গীতপ্রেমী পরিবারে। ভারতের আরেক খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী শচীন দেব বর্মন এবং মীরা দেব বর্মণের পুত্র তিনি।

আর ডি বর্মণ সঙ্গীত পরিচালনায় তার ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৬১ সালে অভিনেতা মেহমুদ প্রযোজিত ‘ছোটে নবাব’ সিনেমায়। পরের তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তার সুরেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ‘ইয়াদো কি বারাত’, ‘গোলমাল’, ‘খুবসুরাত’, ‘সানাম তেরি কাসাম’, ‘শোলে’, ‘রকি’র মতো সিনেমার গানগুলো।

হিন্দি সিনেমার গানে লোকজ ধারার সঙ্গে জ্যাজ এবং ডিস্কো ঘরানার সুরের মিশ্রণ ঘটান তিনিই। তার সুরারোপিত শেষ সিনেমাটি হচ্ছে ‘নাইন্টিন ফর্টি টু: আ লাভ স্টোরি’। ‘এক লাড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা’র মতো মিষ্টি প্রেমের গানের এই সিনেমা মুক্তির আগেই মারা গিয়েছিলেন আর ডি বর্মণ।

ব্যক্তি জীবনে দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আর ডি বর্মণ। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন রিতা প্যাটেল। ১৯৬৬ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু পাঁচ বছরেই দাম্পত্যের ইতি ঘটান তারা।

পরবর্তীতে ১৯৮০ সালে তিনি বিখ্যাত গায়িকা আশা ভোঁসলেকে বিয়ে করেন তিনি। পঞ্চমদার পরিচালনাতে আশা তার জীবনের অনেক বিখ্যাত গান গেয়েছেন। একসঙ্গে তাদের রয়েছে তিন সন্তান।

রাহুল দেব বর্মণ তার জীবনে নানান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮১ সালে ‘সানাম তেরি কাসাম’ সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনার জন্য ফিল্মফেয়ার ‘সেরা সঙ্গীত পরিচালক’-এর পুরষ্কার পান। বর্তমানে তার নামে ফিল্মফেয়ারে ‘আর ডি বর্মণ নবীন সঙ্গীত পরিচালক’ পুরষ্কার দেয়া হয়। কিংবদন্তি এই সঙ্গীত পরিচালক ১৯৯৪ সালের ৪ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাইয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন করেন।

আর ডি বমর্ণের সেরা ১০ গান

সঙ্গীতের উত্তরাধিকার নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। বাবা শচীন দেব বর্মণের হাত ধরে হিন্দি সিনেমার সঙ্গীতের জগতে পা দেন। তারপর একসময় নিজেই হয়ে ওঠেন সে জগতের অধিপতি। বলা হয়ে থাকে পশ্চিমা আঙ্গিকে হিন্দি চলচ্চিত্রের গান পরিবেশনায় এক নতুন মাত্রা দিয়েছিলেন রাহুল দেব বর্মণ।

০১. দাম মারো দাম (হারে রামা হারে কৃষ্ণা, ১৯৭১): এই এক গানের মাধ্যমে জিনাত আমানের ইমেজ আমূল বদলে যায়। গানটি হিপ্পি সংস্কৃতির আবহকে অনেকাংশেই তুলে ধরে। আশা ভোঁসলের কণ্ঠে গানটি আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে আর ডি বর্মনের সেরা কাজগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়।

০২. পিয়া তু, আব তো আজা (ক্যারাভান, ১৯৭১): হেলেন, আর ডি বর্মণ আর আশা ভোঁসলের মেলবন্ধনে অনন্য কিছু গানের জন্ম হয়েছে। তবে এই গানটিকে তালিকায় উপরের দিকেই রাখতে হবে। গানটিতে হেলেনের নাচ, আশার আবেদনময়ী কণ্ঠ আর আর ডি বর্মণের ক্যাবারে ধাঁচের সুর সে সময়ের দর্শক-শ্রোতাদের নতুনত্বের স্বাদ দিয়েছিল।

০৩. আজা আজা (তিসরি মানজিল, ১৯৬৬): আর ডি বর্মণের উদ্দীপক সুর গানটিকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল। সঙ্গে অবশ্যই ছিল মোহাম্মদ রফির মাদকতাপূর্ণ কণ্ঠ। গানটির তালে যে কেউ পা মেলাতে বাধ্য হবে।

০৪. তুম আ গায়ে হো (আন্ধি, ১৯৭৫): অনেকে মনে করতেন আর ডি বর্মণ শুধু ফিউশন সঙ্গীতেই পারদর্শী। কিন্তু এই গানটি সেই মতকে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিশোর কুমার ও লতা মুঙ্গেশকরের গাওয়া এ গানের মাধ্যমে ‘পঞ্চম’ ভারতীয় সঙ্গীত ধারায় নিজের দখলের প্রমাণ দেন।

০৫. তুঝসে নারাজ নেহি জিন্দেগি (মাসুম, ১৯৮৩): লতা মুঙ্গেশকরের গাওয়া এ গানটি সিনেমায় চরিত্রগুলেরা মানসিক টানাপড়েনের জটিলতার সরল প্রকাশ যেন। গুলজারের কথায় মেলোডি নির্ভর গানটি শ্রোতাদের ভাবুক করে তুলবে। 

০৬. আপ কি আখোমে কুছ (ঘার, ১৯৭৮): লতা মুঙ্গেশকর আর কিশোর কুমার জুটির অন্যতম সেরা গান বলা হয় এটিকে। আর ডি বর্মণের রোমান্টিক সৃষ্টির তালিকায় এই গানটি শুরুর দিকে থাকবে। 

০৭. ইয়াদো কি বারাত (ইয়াদো কি বারাত, ১৯৭৩): কিশোর কুমার ও লতা মুঙ্গেশকরের গাওয়া পঞ্চমের আরেকটি সেরা কাজ এটি। সেই সঙ্গে এটি তার সিগনেচার কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।

০৮. চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে (ইয়াদো কি বারাত, ১৯৭৩): গিটার হাতে জিনাত আমানের ঠোঁটে যখন আশা ভোঁসলে গানটি গেয়ে ওঠেন তখন সৃষ্টি হয় অন্যরকম দ্যোতনা। আশার সঙ্গে রাফি সাহেবের যুগলবন্দি গানটিকে অসাধারণ করে তুলেছে।

০৯. তুম সাথ হো জাব আপনে (কালিয়া, ১৯৯৭): আর ডি বর্মণের আরেকটি রোমান্টিক ক্ল্যাসিক গান এটি। চিত্রায়িত হয়েছে অমিতাভ বচ্চন আর পারভিন বাবিকে নিয়ে। আর গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কিশোর কুমার।

১০. রিম ঝিম গিরে সাওয়ান (মানজিল, ১৯৭৯): আর ডি বর্মণের সুরে আর কিশোর কুমারের কণ্ঠে বর্ষা আর প্রেমের সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে এই গানে।

নিউজজি/রুআ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন