শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ , ১২ জুমাদাউস সানি ১৪৪৬

দেশ
  >
জনপদ

রাজশাহীতে রেলওয়ের জমি দখলের অভিযোগ

রাজশাহী প্রতিনিধি ২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪, ১৬:২৩:৪৬

433
  • ছবি : নিউজজি

রাজশাহী: সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ১৯নং ওয়ার্ডে আ.লীগ নেতা ও তার বেয়াইয়ের বিরুদ্ধে রেলওয়ের জমি দখলে নিয়ে কারখানা ও বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। একই ওয়ার্ডের হাজরাপুকুর এলাকায় একটি পুকুর ভরাট করে সেখানে কারখানা তৈরি করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ও দুই তলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন তারা।

যাদের বিরুদ্ধে রেলওয়ের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে তারা হলেন—ক্ষমতাসীন দল আ.লীগের ১৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম ও রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী খাদেমুল ইসলাম। কামরুল ইসলাম ও খাদেমুল ইসলাম সম্পর্কে পরষ্পরের বেয়াই হন।

এদিকে রেলওয়ের জমি দখলের বিষয়টি জানতে পেরে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকের একদল সাংবাদিক হাজরাপুকুর এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে সাংবাদিক প্রতিনিধি দলটি ঘটনার সত্যতা পান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৯ নং ওয়ার্ড আ.লীগের অন্যতম এক শীর্ষ নেতা বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে আ.লীগ নেতা কামরুল ইসলাম ও রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী খাদেমুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি দখলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বছর দশেক আগে হাজারাপুকুর এলাকায় থাকা একটি পুকুর ভরাট করেন আ.লীগ নেতা কামরুল ইসলাম ও রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী খাদেমুল ইসলাম। এরপর সেখানে একপাশে কারখানা স্থাপন করেন কামরুল ইসলাম। এই কারখানায় লোহার দরজা, জানালাসহ গৃহ নির্মাণের বিভিন্ন ধরণের সামগ্রী তৈরি করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি মডেল মসজিদের জন্য দরজা-জানালা সরবরাহ করা হয় এই কারখানা থেকে।

তিনি বলেন, কামরুল ইসলাম এই কারখানায় ব্যবসা করে প্রতি মাসে বিপুল টাকা আয় করেন। রেলওয়ের জমি দখল করে ব্যবসা করলেও কেউই তার কিছুই করতে পারবে না বলে দম্ভোক্তি প্রকাশ করেন কামরুল ইসলাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১৯নং ওয়ার্ড আ.লীগের ওই র্শীর্ষ নেতা আরো বলেন, কামরুল ইসলামের কারখানার আরেক পাশে রেলওয়ের জমিতে ২ তলা বিশিষ্ট পাকা বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন খাদেমুল ইসলাম।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে শ্রমিকলীগের এক নেতা বলেন, আ.লীগ নেতা কামরুল ইসলাম ও রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী খাদেমুল ইসলাম হাজরাপুকুর এলাকায় রেলওয়ের জমি দখল করে সেখানে কারখানা ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ১৯নং ওয়ার্ড এলাকায় রেলওয়ের অনেক জমি রয়েছে। রেলওয়ের জমিতে থাকা বস্তিসহ আরও কয়েকটি জায়গা মাদক কারবারি ও মাদক সেবীরা নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই।

জানতে চাইলে ১৯নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে জমি পেলে তা মেপে বের করে নেবে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। রেলওয়ের কতটুকু জায়গা দখল করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি বলবো কেন? রেলওয়ে মেপে বের করে নেবে।

জানতে চাইলে আরেক অভিযুক্ত রেলওয়ের সাবেক কর্মচারী খাদেমুল ইসলাম কল রিসিভ করেনি। ফলে এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

বাউণ্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও রেলওয়ের জমি দখল সংক্রান্ত বিষয়ে ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (উপ-সচিব) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম প্রকৌশল শাখার সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। 

রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (কার্য) বাবুল আক্তার জানান, আমরা পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছি। বাউণ্ডারি ওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। কোনো স্থাপনা কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তা উচ্ছেদ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দখলদারদের উচ্ছেদে আমরা দ্রুতই চিঠি ইস্যু করবো। তখন এস্টেট শাখা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেবে। 

জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে কেউই রেলওয়ের জমি দখল করতে পারবে না। তদন্তে রেলওয়ের জমি দখলের বিষয়টি প্রমাণিত হলে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।

নিউজজি/এসএম/নাসি 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন