বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ , ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

দেশ
  >
জনপদ

ভোগান্তি মানেই দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট ২৯ নভেম্বর , ২০২৩, ১৪:৩২:১৬

145
  • ছবি : নিউজজি

লালমনিরহাট: পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা স্বাধীনতার ৪৫ বছরও এখানকার মানুষ পদে পদে হয় হরানীর শিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আঙ্গরপোতা এলাকায় ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল থাকলেও নেই কোন চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালের নামে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তা পাটগ্রাম মেডিক্যাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চলাচল করে। দহগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো নেই পাকা, মানুষ তিনবিঘা দিয়ে বের হলেই ব্যাক তল্লাশি করার নামে পদে পদে হতে হয় লাঞ্চিত।

কৃষকের একটি গরুর লালন-পালন করে সঠিক সময় বিক্রি করতে পারে না। একটা গরু তিনবিঘা দিয়ে পার করলে নানান বিপত্তি দেখা দেয়। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক গরুর সিরিয়ালের নামে একজন কৃষক ভোগান্তির শিকার হয়। প্রতিবছর বন্যায় দহগ্রাম ইউনিয়নের প্রবেশ করে বন্যার পানি। তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে ছোট হয়ে আসছে দহগ্রাম ইউনিয়নটি। জায়গা জমি গুলো রেকর্ড ভুক্ত না হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১০ শয্যা (পরে ২০) বিশিষ্ট দহগ্রামে একটি হাসপাতাল উদ্বোধন করলেও সেখানে নিয়মিত কোন চিকিৎসক না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে হাসপাতালটি। এদিকে দহগ্রাম এলাকার জায়গা জমি রেকর্ড ভুক্ত নেই। দখল সূত্রে তারা মালিক। দহগ্রামবাসি মনে করেন সরকার যদি জমিগুলো রেকর্ড ভুক্ত করে তাহলে আমরা সম্পর্ণরুপে স্বাধীন হব। দহগ্রামের মানুষ করিডোর দিয়ে প্রতি সপ্তাহে ভারতীয় বিএসএফ ৬০টি গরুর পারাপারের অনুমতি মিলেও প্রকৃত গরু খামারিরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেক রাস্তাঘাট কাঁচা রয়েছে।

এদিকে, দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের কাছে গত ৫ বছর পূর্বে বন্যায় ভেঙে গেলেও সেই ব্রিজটি মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই কেউই। সেই ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শত শত মানুষ পারাপার হচ্ছে। দহগ্রাম এলাকায় ১৩০টি পরিবারের গুচ্ছগ্রাম থাকলেও সেখানে মাত্র ৫০টি পরিবার অবস্থান করছেন। টিনশেড ঘর গুলোতে থাকার অনুপযোগী তাই ধীরে ধীরে গুচ্ছগ্রাম ছাড়ছে সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপে ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তের পর ভারতের অভ্যন্তরে ২২.৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দহগ্রাম—আঙ্গরপোতা পূর্ব পাকিস্তানের অংশে পড়ে। ১৯৭৪ সালে মুজিব ইন্দিরা চুক্তির সময়, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাকে ভারত ভুক্ত করার প্রস্তাব পেশ করেন।

২০০১ সালের ২১ এপ্রিল আরো ৬ ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করিডোর গেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এরপরেই ২০১১ সালে ১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রাম সফরের মধ্যদিয়ে তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা উন্মুক্ত ঘোষণা করেন।

দহগ্রামের সৈয়দ পাড়ার বাসিন্দার বীর মুক্তিযোদ্ধার পার রহমান বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে চেয়ারম্যান মেম্বারের পিছনে ঘুরতে হয় গরু বিক্রয়ের সিরিয়ালের জন্য। এই দুঃখ কই রাখি।

দহগ্রাম সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজানুর রহমান রেজা প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি তিস্তার টেকসই বাধ চাই। তিস্তার বাধ না হলে দহগ্রাম আঙ্গরপোতা তিস্তার গর্ভে একদিন বিলীন হতে পারে।

দহগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এ সরকার দহগ্রামবাসীর জন্য অনেক কিছু করেছে। তবে আমরা এখনো অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত। প্রতি সপ্তাহে বিক্রির জন্য তিনবিঘা দিয়ে ৬০টি বেশি গরু নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় না বিএসএফ।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, দহগ্রামের গুচ্ছগ্রাম ও সেতুর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ঘরগুলো সংস্কারের উদ্যেগ নেয়া হবে।

 

নিউজজি/এসএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন