বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ , ২১ জিলহজ ১৪৪৬

দেশ

খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের নামে বিশেষ দুর্ভোগ

খুলনা প্রতিনিধি ১৫ মে, ২০২৫, ১৯:১৯:৫৯

101
  • খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের নামে বিশেষ দুর্ভোগ

খুলনা: “বিশেষায়িত” শব্দটি এখন খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের ক্ষেত্রে যেন হয়ে উঠেছে কেবল একটি তকমা—অসুস্থ সিস্টেম আর ভাঙাচোরা বাস্তবতার রূঢ় প্রতিচ্ছবি। বর্তমানে এই হাসপাতালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট—ডায়ালাইসিস বিভাগে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। ২৮টি মেশিনের মধ্যে নিয়মিত চালু থাকে গড়ে ১৬-১৭টি। বাকিগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিকল। যন্ত্রপাতির সংকটে ডায়ালাইসিস নির্ভর কিডনি রোগীরা চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন—বাড়ছে জীবনহানির আশঙ্কা।

খুলনার খালিশপুরের বাসিন্দা আল-আমিন (৩৪) দুই কিডনি অচল হওয়ার পর থেকে ডায়ালাইসিস নির্ভর। চিকিৎসা চালাতে গিয়ে মা ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করেছেন, বিক্রি হয়েছে পৈত্রিক সম্পত্তিও। “বাঁচতে চাই, কিন্তু দিন যত যাচ্ছে চিকিৎসা ততই দূরের স্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে,”—বলেন তিনি।

একই রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন পাইকগাছার বাসিন্দা আলমগীরও। পরিবার গবাদি পশু ও জমিজমা বিক্রি করেও সামলাতে পারছে না সপ্তাহে দুবারের ডায়ালাইসিসের খরচ। “মেশিন নষ্ট থাকায় দুই সপ্তাহের অপেক্ষায় আছি, এটা আমাদের জন্য মৃত্যুর সমান ভয়,”—কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন আলমগীরের স্ত্রী।

শুধু যন্ত্রপাতির সংকট নয়, হাসপাতালের নিচতলা থেকে জরুরি বিভাগের রাস্তাজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আছে। মশা-মাছির দৌরাত্ম্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রোগীর স্বজনেরা নিজেরা মশারি টানিয়ে নিচ্ছেন। সিসিইউ ও ডায়ালাইসিস ওয়ার্ডেও একই চিত্র।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, জনবল সংকট, আউটসোর্সিং বন্ধ, রি-এজেন্ট দেরিতে আসা এবং পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে সাময়িক সংকট চলছে। হাইকোর্টের রিট থাকায় নতুন কন্ট্রাক্টর নিয়োগ দিতে পারছি না।

ডায়ালাইসিস মেশিন নিয়ে তিনি জানান, “নিফ্রো কোম্পানির যন্ত্রগুলো যতটা সম্ভব সার্ভিসিং করে রাখছি, বাকিগুলোর অনেকগুলোই পুরনো ও প্রায় অকেজো। আমরা নিয়মিত রিপোর্ট করছি। তবে মেরামতের পরেও অনেক যন্ত্র কিছুদিন পর আবার বিকল হয়ে যায়।”

এছাড়া এনজিওগ্রাম এবং হার্টে রিং পরানোর কার্যক্রমও মাসের পর মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। প্যাথলজির কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বন্ধ—যেমন ব্লাড সুগার ও ক্রিয়েটিনিন। তবে আগামী ১-২ দিনের মধ্যে এগুলো পুনরায় চালু হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

২০২৩ সালে এখানে ডায়ালাইসিস হয়েছে ১৪ হাজার ১৯টি সেশন। একই সময়ে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৯ হাজার কিডনি রোগী। কিন্তু এত বড় রোগী চাপে নেই পর্যাপ্ত জনবল, নেই কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা।

সম্প্রতি আন্দোলনের মুখে হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করা হলেও সেবার মানে কোনো উন্নয়ন আসেনি—এমনটাই অভিযোগ রোগীদের। বরং ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি ও যন্ত্রপাতির নিরাপত্তাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ।

একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল শুধু নামেই নয়, কার্যকর চিকিৎসা, পরিচ্ছন্নতা ও সেবাপদ্ধতির মানেই বিশেষায়িত হতে হয়। খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের এই দুরবস্থা স্বাস্থ্য খাতে একটি ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার নিদর্শন। সময় এসেছে দ্রুত মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের।

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন