শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ , ১৬ মুহররম ১৪৪৭

দেশ

ঈদগাঁওয়ে পাহাড়ি পথে বার্মিজ গরু পাচারের হিড়িক

ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ১৫ মার্চ, ২০২৫, ১২:৫৯:০৮

61
  • ছবি : নিউজজি

কক্সবাজার: ঈদগাঁও উপজেলার কালির ছড়া ও সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা গরু পাচারের নিরাপদ জোনে পরিণত হয়েছে। এ এলাকার বিভিন্ন পাহাড়ি পথ দিয়ে প্রায় প্রতিদিন বার্মিজ গরু পাচার করা হচ্ছে। স্থানীয় ও বহিরাগতরা মিলে কয়েকটি সিন্ডিকেট হয়ে দীর্ঘদিন যাবত মিয়ানমারের গরু আনা হচ্ছে চোরাই পথে।

এ অপকর্মে জড়িত রয়েছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারা। গরু পাচারকে কেন্দ্র করে অতীতে এখানে নানা অপ্রীতিকর ঘঠনাও ঘটেছে। এলাকার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও চোরাই গরু সিন্ডিকেটের এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে নতুন ভাবে এ সিন্ডিকেট যুক্ত হয়েছে কিছু চিহ্নিত মুখ। কখনো কখনো গরু বহনকারী গাড়িতে ঠেক দিয়ে চাঁদাও দাবি করা হচ্ছে। অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য ক্ষেত্র বিশেষে নাটকেরও আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কালির ছড়ার পাহাড়ি পথে চোরাই গরু পরিবহনকালে ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এনিয়ে এলাকাবাসীরা ছিলেন চরম আতঙ্কে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর নিয়ে জানা যায়, কয়েকদিন আগে পাহাড়ি এলাকা উত্তর পাড়ার সড়ক দিয়ে রামু উপজেলার গর্জনীয়া থেকে অবৈধ উপায়ে গরু পাচার করা হচ্ছিল। দুইটি ছোট ডাম্পারে ছোট-বড় ২০টি গরু ঈদগাঁওর আড়তের দিকে আনা হচ্ছিল। গাড়ি ২টি উত্তর পাড়া মসজিদ এলাকায় পৌঁছুলে সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা ঠেক দেয়। সন্ত্রাসীরা চালককে মারধর করে মোবাইল ও গাড়ির চাবি কেড়ে নেয়। এ সময় গাড়ির লোকাল গ্লাসও ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঈদগাঁও থানার পুলিশ কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে। গরু গুলোর মালিক ছিল পার্শ্ববর্তী রশিদ নগর ইউনিয়নের ধলির ছড়া কাহাতিয়া পাড়ার সাদ্দাম হোসেন। ঘটনাস্থলে গরুর মালিকের সাথে দুর্বৃত্তদের হাতাহাতি হয়। তবে গাড়িগুলো ঈদগাঁওর আড়তে চলে যেতে সক্ষম হয়।

এদিকে স্থানীয় জয়নাল নামক একজন পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয় যে, ঘটনা চলাকালীন তার ২টি গরু চুরি হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরদিন সকালে আবারো পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা পার্শ্ববর্তী তেতুল গাছ তলার ফরিদের দোকানে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করে। কিন্তু যাচাইকালে পুলিশ গরু চুরির কোনো সত্যতা পায়নি। বিপরীতে পুলিশ এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, ২০টি গরু বুঝাইকৃত ২টি ডাম্পার ওই পথ দিয়ে পরিবহন করা হয়েছে। এদিকে জয়নাল গরু চুরি হয়েছে মর্মে থানায় অভিযোগ দেয়ার চেষ্টাও করেছে।

এলাকার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পরদিন গরু চুরির অভিযোগকারী কৌশলে তার গরু দুটি আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রেখে আসে। ঘটনাস্থলে তদন্তে যাওয়া ঈদগাঁও পুলিশের এসআই আরকানুল ইসলাম ফুটেজ থেকে গাড়ির নম্বর নিয়ে কল করে নিশ্চিত হন যে, গরু ২টি সরিয়ে রাখা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত লুকিয়ে রাখা গরু ২টি চুরি হয়েছে বলে জয়নাল থানায় মামলা দায়েরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঈদগাঁও থানার এসআই আরকানূল ইসলাম থেকে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার কোনো বর্ণনা না দিয়ে সব তথ্য ওসির কাছ থেকে পাওয়া যাবে বলে জানান।

ঈদগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ মছিউর রহমান জানান, গরু ডাকাতির কোন সত্যতা মিলেনি। অন্যদিকে ২টি গরু চুরির বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তিনি পাচারকালে গরু বোঝাই গাড়িতে ঠেক দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পুলিশের উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে দুর্বৃত্তরা দ্রুত সটকে পড়ে।

এলাকার সচেতন মহল জানান, গরু পাচার সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবত গভীর জঙ্গলের পথ দিয়ে চোরাই গরু পরিবহন করছে। ঈদগাঁও গরুর বাজার কেন্দ্রীক আড়ত থেকে রশিদ নিয়ে গরু গুলো বৈধ হিসেবে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাচার করে আসছে। এতে সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেট দিন দিন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠছে।

 

নিউজজি/এসএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন