মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩১ পৌষ ১৪৩১ , ১৪ রজব ১৪৪৬

দেশ

নামে ওরস , মেলান্দহে এ যেন মাদকসেবীদের মিলনমেলা

জামালপুর প্রতিনিধি ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৯:২৬:২২

117
  • নামে ওরস , মেলান্দহে এ যেন মাদকসেবীদের মিলনমেলা

জামালপুর: জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ সুরুলিয়া এলাকায় মা বারই রানির মাজারে চলছে ৪৩তম ওরস। এ ওরসের নামে প্রকাশ্য চলছে মাদক সেবন ও বেচাকেনা‌। ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া পনোরো দিনের এই ওরস শেষ হবে আগামী ১৯ ডিসেম্বর।

ওরসে প্রতিদিন পাগলের ভক্তরা গাঁজার আসর বসিয়ে গাঁজা সেবন ও বিক্রি করছেন। মাদক সেবনে যোগ দিচ্ছেন জেলার বিভিন্নস্থান থেকে আসা তরুণ শিক্ষার্থী ও যুবকেরা। তারা মনে করেন ওরস মেলায় এসেছেন আর গাঁজা খাবেন না তা কি করে হয়? সব মিলিয়ে এ যেন ওরসের নামে মাদকসেবীদের মহামিলন মেলা।

তবে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন এসব মাদক সেবন ও বেচাকেনা‌ বিষয় জেনেও নীরব আছেন বলে অভিযোগ করেছেন সচেতন নাগরিকেরা। 

মা বারই রানি উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান আউলিয়া হজরত শাহ কামাল ইয়ামেনি (র.) এর সহধর্মিণী। উপজেলার সরুলিয়া এলাকায় মা বারই রানি (রহ.) ইয়েমেনির মাজার অবস্থিত। এই মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

মেলাকে কেন্দ্র করেই মাজারের আশপাশে বসে বিভিন্ন দোকান। এ সব দোকানে প্রকাশ্যে মেলায় আসা ভক্তদের কাছে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা। এবারও মেলায় শতাধিক গাঁজার দোকান বসেছে।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর ) রাতে সরেজমিনে মাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় মাদকসেবীরা মাজারের পুর্ব পার্শ্বে ফসলের খোলা মাঠে শতাধিক মাদক বিক্রি ও সেবনের আস্তানা গেড়ে বসেছে। সকল প্রকার মাদক দ্রব্যই পাওয়া যায় এ মেলায়। প্রকাশ্যে দাঁড়ি পাল্লায় মেপে বিক্রিও হচ্ছে গাঁজা। ১৫ দিনের এ মেলায় বসা শতাধিক দোকানের প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ১শ-৩শ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।

আর প্রতিদিন বিকেল থেকেই জমতে থাকে এইসব মাদকের দোকান। চলে সারারাত। মেলা প্রাঙ্গণ যেন নেশার স্বর্গরাজ্য ও নিরাপদ স্থান। দলে দলে আস্তানায় চলছে মাদক সেবন। মেলা প্রাঙ্গণের বাতাসে বইছে গাঁজার গন্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, এই মেলার জন্য এই এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। কিছু প্রভাবশালী মানুষ মেলার নামে গাঁজার জমজমাট ব্যবসা করছে। ওরসের নাম নিয়ে এখানে মাদক ব্যবসা করে টাকা কামানোয় তাদের আসল উদ্দেশ্য।

এ সব বিষয়ে মাজারে ওরস পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. লিখনুজ্জামান লিখনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, মাজার এভাবেই চলে। পূর্বেও এভাবেই চলছে। এবারও তাই চলবে। পাগলের ওরসে গাঁজা চলেই। এখানে ডিএসবির লোক আছে, প্রশাসনের লোক আছে, সব লোক আছে। ওনাদের সম্মতি নিয়েই সরাসরি চলতাছে। ইউএনও, ডিসি, এসপি, ওসির রেফারেন্সে চলে অনুমতিক্রমে।

ওই ইউনিয়নের বিট পুলিশিংয়ের দায়িত্বে থাকা মেলান্দহ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম হিমন জানান, ওখানে দু-তিন জন গিয়ে অভিযান চালানো সম্ভব না। ওখানে সবাই পাগল। অভিযানে কম লোক গেলে আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একা সেখানে গেলে বেঁধে মারতেও পারে। অভিযানে ২০- ২৫ জনের টিম অংশ নিতে হবে।

জামালপুর সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কমিটির সভাপতি মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘ওরস মেলার নামে এভাবে প্রকাশ্যে মাদক সেবন বন্ধ না হলে যুবসমাজ ও শিক্ষার্থীরা মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়বে। মেলায় মাদক সেবন ও বিক্রির বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাই জানলেও কেনো কোনো অভিযান পরিচালনা হচ্ছে না জানা নাই,। দ্রুত অভিযান করে এসব বন্ধ করার দাবি জানাই।

মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুজ্জান জানান, ওরসে মাদক চলে জানতাম না। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। দ্রুত সময়ের মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তা নিয়ে অভিযান চালানো হবে।

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন