ডিবি পুলিশে কর্মরত এসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

নবীনগর: লক্ষ্মীপুর জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের এসআই আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়ার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন মোহাম্মদ সজীব মিয়া। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের নারুই (ব্রাহ্মণহাতা) গ্রামের মো. রেজাউল করিমের পুত্র।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার নারুই (ব্রাহ্মণহাতা) গ্রামের সৈয়দ শফিকুল ইসলামের পুত্র এসআই আশরাফুল ইসলাম ওরফে প্রকাশ সেলিম একজন প্রতারক, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর, মাদক ব্যবসায়ী ও অবৈধ অস্ত্রধারী লোক। সে দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় নীরবে মাদক ব্যবসা, চোরাচালান ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসী বাহিনী ও মাদকের সাম্রাজ্য। সে এলাকার মাস্তান, চোর, ইয়াবাখোর, ডাকাতদের সংগ্রহ করে বিশাল বাহিনী গড়ে তুলেছে। এলাকার উঠতি বয়েসি তরুণ যুবকদেরকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের নেশায় আকৃষ্ট করে অসামাজিক বিভিন্ন কার্যকলাপে বাধ্য করে। তার অবৈধ আয়ের বিরাট অঙ্কের টাকা দিয়ে মাস্তান বাহিনীকে চালায়। এসআই আশরাফুলের গঠিত ওই সন্ত্রাসী বাহিনীরা হলেন, লাল মিয়ার পুত্র ১নং ওয়ার্ড কাইতলা উত্তর আওয়ামীলীগ সভাপতি অলি মুন্সী, আ.লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, মলাই, মনির, আমিরুল, বোরহান উদ্দিন, মেহেদী, কাইয়ুম, সাইফুলসহ নাম না জানা আরও ১২/১৫ জন । তাদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ জর্জরিত। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। তাদের বাহিনী দিয়ে হামলা মামলার মাধ্যমে মানুষকে ভয় দেখায়। এলাকার নীরিহ লোকদেরকে বিভিন্ন থানায় মামলার ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে যেসব ফৌজদারী মামলাগুলো চলমান রয়েছে সিআর মোকদ্দমা নং-১৪৮/২০২৪ ধারা ৫০০/৫০১, সাইবার পিটিশন মামলা নং ১৪৫/২০২৪ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ এর ২৫/২৬/২৯/৩১/৩৩ দণ্ডবিধি, সিআর মোকদ্দমা নং ৮২৭/২৪ইং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ধারা ১৪৩/৩৮৫/৫০৬ (২)/১১৪/৩৪ পেনাল কোড, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা নং ৮৫২/২০১৭ চকরিয়া থানা, কক্সবাজার, হত্যা মামলা যাত্রাবাড়ি থানার মামলা নং- ৪৫(৯) তাং- ১৩/০৯/২০২৪ইং ধারা- ১৪৩/৪৪৭/৩০২/১০৯/১১৪/৩৪ দণ্ডবিধি (ডিবি হারুনের ক্যাশিয়ার), বাড্ডা থানা, ঢাকা মামলা নং-২৯ তারিখ ২৯/০৯/২০২৪ইং ধারা—৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩০২/১১৪/১০৯/৩৪। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে অনেকবার অভিযোগ করলেও আওয়ামী সরকারের আমলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ ব্যক্তিগণ দিয়ে এবং উচ্চপদস্থ পুলিশের কিছু অসাধু অফিসার দিয়ে ঘুষের বিনিময়ে সে পার পেয়ে যায়। কিছুদিন আগে লক্ষ্মীপুর ডিবি কার্যালয় থেকে বরখাস্ত করা হলেও বর্তমানে সে আবার তার চাকরিতে যোগদান করার জন্য পায়তারা করিতেছে।

বরখাস্তের আদেশে উল্লেখ আছে কোন ফৌজদারি মামলা চলমান থাকিলে তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার হইবে না। কিন্তু অতি চালাক এস আই আশরাফুল তাহার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ফৌজদারী মামলাগুলো চলমান থাকাবস্থায় গোপনীয়তা বজায় রেখে তাহার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় তানভীর হোসেন সাগর নামের এক ব্যাক্তিকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে দেয়ার কথা বলে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে। কাজ করে দিতে না পারায় টাকা ফেরৎ চাইতে গেলে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে।

এছাড়াও ওই এসআই আশরাফুল একাধিক ফেইক ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সম্মানীয় ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য প্রচার করে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। তার এই কার্যকলাপে কেউ বাঁধা প্রদান করলে মিথ্যা মামলার হুমকী অথবা মরদেহ গুম করে নদীতে ফেলে দেয়ার ভয় দেখায়।

তার বিরুদ্ধে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের পরামর্শক্রমে সাইবার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে সাইবার পিটিশন মামলা নং ১৪৫/২০২৪ইং (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মামলা দায়ের করা হলে মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আদালত থেকে নিদের্শনা দেয়া হয়। সিআর ১৪৮/২৪ইং ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করিলে উক্ত মামলার আসামি এসআই আশরাফুল ও অন্যান্য আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এ দিকে, মামলাগুলো তুলে না নিলে আমাকে হত্যার হুমকি দিতেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কারণে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাদের ঘরবাড়ী পুড়িয়ে আমাকে নিঃস্ব করে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। কাজেই আমি ভীত সন্ত্রস্থ। জরুরি ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আমি ও আমার পরিবারবর্গকে বিপদে ফেলতে পারে বলে আমি ধারণা করিতেছি। আমি প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছি। এর আগেও বেশ কয়েকবার এসআই আশরাফুলের কুকর্মের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপার, আইজিপি, রেঞ্জ ডিআইজি চট্টগ্রাম ও জেলা পুলিশ লক্ষ্মীপুর বরাবরে বার বার এসআই আশরাফুল ও তার বাহিনীর কুকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করিলেও এখন পর্যন্ত আমরা এলাকাবাসী কোনও ফলাফল পাই নাই। পুলিশ সুপার ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নবীনগর থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবরে শত শত মানুষের স্বাক্ষরকৃত অভিযোগ দিলেও তৎকালীন পুলিশ সুপার তাহার পক্ষ নিয়ে কাজ করিতেন। সেজন্য এসআই আশরাফুলের অনৈতিক কার্যলাপের মাত্রা আরও বাড়িয়া গিয়াছে। আমি অভিযোগ করার কারণেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কারীগণকে অভিযোগ ও মামলা তুলে না নিলে আমি ও আমার পরিবারবর্গকে যে কোনও সময় প্রাণে হত্যা করে লাশ গুম করিয়া ফেলিবে বলে হুমকি দিয়াছে।

আমি তার বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবরে বার বার অভিযোগ করেও আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে কোনও সুফল পাচ্ছি না। এমনকি অভিযোগগুলো কে বা কারা তদন্ত করে তাহার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হইয়াছে তাহা আমরা জানি না, আমরা শুধু একের পর এক অভিযোগ করিয়াছি। এই দিকে এসআই আশরাফুল সরকারি চাকুরির বিধিমালা না মানিয়া নবীনগরের কাইতলা উত্তর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডেও আওয়ামীলীগের কমিটির কার্যকরী সদস্য পদ লাভ করেন । সে আওয়ামী লীগ পরিবারের চিহ্নিত সন্ত্রাসী দালাল ও মামলাবাজ প্রতারক। এসআই আশরাফুল ডিবি হারুনের প্রভাবে চলত এবং বিভিন্ন সময় সে ডিবি হারুনের আস্থাভাজন লোক হিসাবে বিভিন্ন মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করিত।

সে ডিবি হারুনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল তাকে ডিবি হারুনের ক্যাশিয়ার বলা হইয়াছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ও জেলায় হত্যা ডাকাতি চুরি রাহাজানিসহ অনেক মামলা থানা ও আদালতে চলমান রয়েছে। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এসআই আশরাফুল ২টি হত্যার মামলার ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। এমনকি ছাত্রদের উপর ঝাপিঁয়ে পরে হত্যার ঘটনা ঘটায়। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির বলে আজোব্দি এসআই আশরাফুল কে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। দ্রুত তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান অভিযোগকারী।

নিউজজি/নাসি