মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ , ১৯ শাবান ১৪৪৬

দেশ

অনুমোদনহীন ডুপ্লেক্স বাড়ি বাবাকে দান করলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী

মাদারীপুর প্রতিনিধি ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩:৪৫:৪২

176
  • ছবি : নিউজজি

মাদারীপুর: আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হলফনামায় সম্পদ কম দেখাতে ৩ কোটি টাকার মূল্যের ডুপ্লেক্স বাড়ি বাবাকে দান করলেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। এনিয়ে উপজেলা জুড়ে বইছে আলোচনা ও সমলোচনা। এই ভবন নির্মাণের অর্থ জোগান নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন। আর পৌরসভার ভবন নির্মাণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভবন নির্মাণ করায় নিরুপায় পৌর কর্তৃপক্ষও।

গত ৯ এপ্রিল মাদারীপুর সদর সাব রেজিস্টার অফিসে হেবা ঘোষণার মাধ্যমে বাবা ইসমাইল হোসেনকে এই ডুপ্লেক্স বাড়িসহ জমি দান করেন মেয়ে ফারজানা নাজনীন। ফারজানা নাজনীন মাদারীপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পেছনে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি। যা নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। মাদারীপুর পৌরসভার ১১১নং শকুনী মৌজার ৩৮৭, ৩৮৮ ও ২৮৯ নং দাগে ৭ শতাংশ জমির উপর নির্মিত হয়েছে ৩ তলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়িটি। এই সম্পত্তির মালিক ফারজানা নাজনীন ও তার মেয়ে তাসনিম জাহান মীম। ফারজানা নাজনীন তার বাবা কুনিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেনের নামে গত ৯ এপ্রিল ২৩৩৭নং দলিলে ‘হেবা ঘোষণার’ মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন করেন। পরে দাখিল করেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র। নির্বাচনের হলফনামায় সম্পত্তি কম দেখাতেই বাবার নামে লিখে দিলেন কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি।

পৌরসভা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ ভূমি জরিপ বিআরএস রেকর্ডে সংশ্লিষ্ট দাগ ও খতিয়ানে ডোবা থাকায় ভবন নির্মাণ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায় অনুমোদন দেয়া হয়নি। ওই জায়গায় ভবন নির্মানের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত চাইলেও সবশেষ পৌরসভার সার্ভেয়ার ও ইঞ্জিনিয়ারসহ বিশেষজ্ঞরা দেননি কোন অনুমোদন। পরে ফারজানা নাজনীন ক্ষমতার অপ্যবহার করেই এই ভবন নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলের হলফনামায় তিনি ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ২ হাজার টাকা। আর নগদ অর্থ সাড়ে ৪ লাখ টাকা উল্লেখ করেছেন। তাহলে জনমনে এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিপুল অর্থে নির্মিত ডুপ্লেক্স বাড়িটির অর্থ জোগান আসলো কোথা থেকে? সম্প্রতি এনিয়ে বেশ কয়েকজন সচেতন নাগরিক ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছে। দুদককে অনুসন্ধান করতেও অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

যুব মহিলা লীগ নেত্রী ফারজানা নাজনীন বলেন, আমার স্বামী লিয়াকত হাওলাদার ইতালী থেকে টাকা পাঠিয়েছেন, সেই টাকা থেকে নির্মাণ করা হয়েছে এই বাড়ি। এছাড়া আমি জেলার একমাত্র নারী ঠিকাদার, আমি ব্যবসা করি, আমার ব্যবসার টাকায় বাড়িটি নির্মাণ ব্যয় করা হয়েছে।

পৌরসভা থেকে কোনো অনুমোদন নেয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিলাম, কিন্তু পৌরসভা অনুমোদন দেয়নি। পরে অনুমোদনছাড়াই ভবন নির্মাণ করেছি।

সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগেই বাড়ির মালিকানা কেন পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, বাড়ির জমি নিয়ে ঝামেলা থাকায় বাবার নামে লিখে দেয়া হয়েছে। জমিটা মূলত বাবার, কিন্তু বাড়ি আমি নির্মাণ করেছি।

মাদারীপুর পৌরসভার সার্ভেয়ার এনায়েত হোসেন বলেন, ফারজানা নাজনীন ভবন নির্মানের জন্য আবেদন করেছিলেন, পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জায়গাটি ডোবা। বিআরএস রেকর্ডে ডোবা থাকায় পৌরসভা এজন্য কোনো অনুমোদন দেয়নি।

দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুরের সহকারি পরিচালক মো. আকতারুজ্জামান বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ আসলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণের অর্থ জোগানের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেয়া হবে।

 

নিউজজি/এসএম

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন