শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ , ১৯ রমজান ১৪৪৫

সাহিত্য
  >
কবিতা

ফকির ইলিয়াসের গুচ্ছকবিতা

 জুলাই ২৪, ২০১৭, ১৪:০৮:২৩

3K
  • ফকির ইলিয়াসের গুচ্ছকবিতা

রোদের রসায়ন

হারিয়ে যাওয়া উঠোনের মতোই সারারাত জেগে থাকে বিস্তৃত

চাঁদের ছন্দদুঃখ। দিনে- রোদের রসায়ন পাঠ করে যে কুমারী 

বৃষ্টিকে ভালোবেসেছিল, সেও ভুলে যেতে থাকে- এই উঠোনের

শেষপ্রান্তে বেঁচেছিল একটি পুরোনো বেলগাছ। গাছের নীচেই ছিল

পিতামহের ছোট্ট বৈঠকখানা। বামপাশে ছিল একটি বাড়ন্ত 

জলপাই গাছের ছায়া।

ছায়ার মাঝে হারিয়ে গিয়েই পিতামহ পাঠ করতেন ‘জঙ্গনামা’ পুথি।

গাজী-কালুর কিসসা শোনাতে শোনাতে ডাকতেন- কোথায় রে ছায়াকুমারী!

আয়, শুনে যা তোদের দাদিজানের যৌবনের গপ্‌পো। কীভাবে তিনি

পেরিয়ে এসেছেন ঢেঁকিকাল। কীভাবে রোদের অন্বেষণে একে একে খুলে

দেখতেন মাঘের সকল ভাঁজ।

এখন কুমারীরা রোদের দিকে তাকাতে পারে না। মেঘের ভাঁজপত্র হাতে

দাঁড়াতে পারে না প্রেমের রাজকুমার।

সিকি-আধুলির ডিজিটাল ঝলক কাঁপিয়ে দেয় প্রেমযমুনার মৌসুমী জোয়ার।

২.

হাতে লেখা কবিতা

আমরা একসাথেই দেখতে থাকি

তরমুজ ও তীর্থ, বীজ ও ভবিষ্যতের হিসেব।

লিখে রাখি যে খাতায়-

তার লাইনটানা পাতাগুলো আমার হাতে

তুলে দিয়েছিল যে ঢেউ,

সে আজ থাকে দূরদেশে।

কাটা তরমুজের রক্তে তীর্থ ভেসে যায়

মানুষ দেখে না কিছুই

কয়েকটি প্রাণের শবদেহ- পড়ে থাকে

আমার মুমূর্ষু নিশ্বাসের পাশে, যৌথ অবহেলায়। 

৩.

বীজ ও বর্তমান

অসমাপ্ত ছায়া রেখে বিদায় নিলো চাঁদের গ্রহণ

আমি যে রাতকে আলিঙ্গন করব বলে 

                  এসেছিলাম নদীকূলে,

সেই নদীও আমাকে দেখালো একান্ত ভাটিতন্ত্র

একা হয়ে যাবার আগে

        আমি সবিনয়ে পরখ করতে চাইলাম

        আমার পদছাপ। 

এই পথে হেঁটেছে এর আগেও কেউ।

এই বীজপত্রে লেগে আছে যে বৃষ্টির ফোঁটা- তা দেখে

আমি ইতিহাসকন্যার কাছে,

         জানতে চাইলাম রক্ত ও রঙের

         পার্থক্য। জানতে চাইলাম- আমার পূর্ববর্তী

পথিকেরা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে।

আমার সদ্যপ্রেমিকা ইতিহাসকন্যা মুখ ফিরিয়ে নিলো।

বলল-

‘তুমি পঠনের পরিণাম জানো না,

চেনো না ঘটনা অতিক্রম করার অবিকল্প পথ।

যদি জানতে-

      তবে চন্দ্রবীজেই খুঁজে নিতে পারতে 

      তোমার বর্তমান ঠিকানা।’

আমি অসহায়ের মতো আর্তনাদকেই-

লুকিয়ে রাখতে চাইলাম পাঁজরের অবিকল প্রচ্ছদে।

৪.

অন্তরে, জলান্তরে

জমে থাকে নীলজলের ছায়া। তুমি বলো ছায়া নয়- গ্রহ

যে পথে চন্দ্রিকা রায়, সাধন দেব-এর হাত ধরে দিয়েছিল

সাতপাক, অবশেষে বেঁধেছিল ঘর। কিংবা সকল বিরহ

ভুলে নবীন হেমন্তগুলো দাঁড়িয়ে তার পাশে ছবি এঁকেছিল।

জানি সেই ছবিকন্যা এখনও নক্ষত্র প্রদেশে

খুঁজে সব স্মৃতিমেদ- পৃথিবীর আদিম আকর থেকে প্রেম

কুড়িয়ে দুপুর-সন্ধ্যা, রাতকেও তুলে রাখে পাশে

আর বলে- হে সমুদ্র, তোমাকেও বুকেতে নিলেম!

জলান্তরে যেতে যেতে যে উষ্ণতা বিষাদ প্রকাশে

আমি তো তাকেই বলি ভালোবাসা- চিহ্নহীন, নীল সূর্যগ্রাসে।

 ৫.

মায়াবাদ

মার্ক্সসবাদী নদীর বাহু ছুঁতে ছুঁতে আমি চরের দিকে বাড়িয়ে দিই

আমার ধাবমান ছায়া। এখানে বৃহস্পতির কোনো বসতি ছিল না,

দেখে ফিরতে চাই শুক্রের অনুকূলে। মঙ্গলকে যে চিঠি এর আগে

লিখেছিলাম- তা আবার পড়ে দেখি। আমি কি বানান ভুল করেছিলাম

খুব! ‘বুধ’-কে ‘বোধ’ লিখে অবোধ বৃক্ষের গায়ে ছিটিয়েছিলাম

আরোগ্যের হলুদ!

সামনেই ‘রবি’ কবির বাড়ি। শিলাইদহের শিলা সাজাতে সাজাতে-

তিনি রেখে গেছেন যে মায়াবাদ, আমি তার হাতেই সমর্পণ করি

সোমবারের ভোর। শনিগ্রহে বিশ্বাস না করেই, তোমাকে বলি-

 স্পর্শ করো শুধু এই দ্বিমাত্রিক স্বেচ্ছানির্বাসন।

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন