শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ , ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দেশ

ঠান্ডায় কমেছে হবিগঞ্জের শুঁটকি উৎপাদন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১৭:০৬:১১

502
  • ঠান্ডায় কমেছে হবিগঞ্জের শুঁটকি উৎপাদন

হবিগঞ্জ: প্রতিবছরই দেশের চাহিদা মিটিয়ে জেলা থেকে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। জেলার বানিয়াচং, আজমিরিগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও লাখাই উপজেলার অন্তত ৫ শতাধিক পরিবার শুঁটকি উৎপাদনের সাথে জড়িত রয়েছেন। বর্ষার শেষে হবিগঞ্জে পুরোদমে শুরু হয় শুঁটকি উৎপাদন।  এখানকার উৎপাদিত শুঁটকিতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার না করায় এর স্বাদ ও কদর আলাদা। কিন্তু এ বছর শুঁটকি উৎপাদনকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।

বৃষ্টি, ঠান্ডা আবহাওয়া, হাওরের জলাবদ্ধতা, কাঁচা মাছের চেয়ে শুঁটকির দাম কম, পুঁজির অভাব ও সরকারি ঋণ না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শুঁটকি উৎপাদনকারীদের লোকসানের পরিমাণ। একের পর এক লোকসানের মূখে তারা দিতে পারছেন না শ্রমিকদের বেতন। ফলে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সঙ্কটও।

শুঁটকি উৎপাদনকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ডিসেম্বর মাসের টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে বিরাট অঙ্কের লোকসান গুণতে হয় তাদের। সেই সাথে বর্তমানে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকার কারণে দিনের অধিকাংশ সময়ই দেখা মিলছে না সূর্যের।ফলে শুঁটকি শুকাতে না পারায় অনেক শুঁটকি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তবে, শুঁটকি উৎপাদনকারীদের লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তাদের ঋণও বেড়ে যাচ্ছে। সরকারিভাবে ঋণ ও সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে মহাজনদের কাছ থেকে অধিক সুদের ঋণ এনে শুঁটকি উৎপাদন করছেন অনেকে। ফলে প্রতিমাসেই মহানজনকে দিতে হচ্ছে অধিক হারে সুদ। সেই সাথে সরকারি কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে অনেকে আবার এ ব্যবসা থেকে সরে পড়ছেন।

এদিকে, শুকনো মৌসুমেও হাওরের পানি না কমায় অন্য বছরের তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মাছের অভাবে কাঙ্ক্ষিত হারে শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে শুঁটকি উৎপাদনকারী বানিয়াচং উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের ইন্দ্রজিত দাস জানান, ‘এ বছর মাছের দাম বেশি।অতছ শুঁটকির দাম কম। তাই শুঁটকি উৎপাদন করে লাভবান হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন- ‘লুকসান হলেও বাপ-দাদার এ ব্যবসা আমরা ছাড়তে পারছি না।’

একই এলাকার আরতি বালা দাস বলেন- ‘সরকার থেকে আমাদের মাঝেমধ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিন্তু কোনো ধরনের ঋণ আমরা পাই না। আমাদের আর্থিক অবস্থার কারণে শুঁটকি উৎপাদন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

রানু বালা দাস জানান- ‘মহাজনদের কাছ থেকে বেশি সুদে টাকা আনতে হয়। ফলে আমাদের যা লাভ হয় তা মহাজনদের দিয়ে দিতে হয়।’

উমেদনগর এলাকার নজরুল ইসলাম জানান, ‘গত মাসের তিন দিনের বৃষ্টির কারণে আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। এর মধ্যে এখন প্রচন্ড টান্ডার কারণে দিনের বেশিরভাগ সময়ই রোদের দেখা মিলছে না। ফলে ঠিক সময় শুঁটকি শুকাতে না পারায় বেশিরভাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

শুঁটকির পাইকারি ব্যবসায়ী মহি উদ্দিন জানান- ‘অন্য বছর পৌষ মাসে হাওরের পানি শুকিয়ে যায়। কিন্তু এ বছর হাওরে পানি রয়ে গেছে। ফলে মাছ ধরা সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুঁটকি বাজারে উঠছে না।

জেলা মৎস কর্মকর্তা মো. এনামূল হক জানান, ‘মৎস অফিসের উদ্যেগে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’ তবে সরকারি কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না বলে স্বীকার করে তিনি বলেন- ‘আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শুঁটকি উৎপাদনকারীদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছি।’

 

নিউজজি/জেডকে

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন